৮০ দিন পর আমদানি-রফতানি চালু, চার ঘণ্টা পর বন্ধ

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে টানা ৮০ দিন আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গতকাল ফের শুরু হয়। তবে কার্যক্রম শুরু হওয়ার মাত্র ৪ ঘণ্টা পর ভারতীয় জনতার চাপের মুখে আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে ভারত-বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ৭৮টি ট্রাকে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়।

জানা গেছে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল সকাল ১০টায় প্রথমে ভারত থেকে পাথরবোঝাই তিনটি ট্রাক পণ্য নিয়ে কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস হয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। এরপর একে একে তিন দেশের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করতে থাকে। এর আগে গত সোমবার দুপুরে ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বুড়িমারী স্থলবন্দর জিরো পয়েন্টে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালু করা সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বুড়িমারী কাস্টমস ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত ২২ মার্চ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত টানা ২ মাস ২০ দিন আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা, ভুটানের ফুলসিলিং ও বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দরে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন। অন্যদিকে সরকারও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হয়। এরই মধ্যে আবারো আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় তিন দেশের ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তবে কয়েক ঘণ্টা পর আবার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বুড়িমারী বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চ্যাংড়াবান্ধার ভারতীয় স্থানীয়রা আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে। তাদের দাবি বন্দরের কার্যক্রম চালু থাকলে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য তারা উভয় দেশের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো আটকে দিতে থাকে। একপর্যায়ে ওপারের ব্যবসায়ীরা স্থানীয়দের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলেও সেটি কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি। আর এ কারণেই বন্দরের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই উভয় দেশের গাড়ি আসা-যাওয়ায় বাধা দিতে থাকে। এরই জেরে ৪ ঘণ্টা পর আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী শামীম হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা মেনে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তবে ভারতীয়দের বাধায় এটি আবার বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ভারত-ভুটান থেকে ৪৫টি ট্রাকে করে বাংলাদেশে পণ্য প্রবেশ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয় ২৫ ট্রাক পণ্য। আর আট ট্রাক পণ্য রফতানি হয় ভুটানে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ডিডি) মো. মাহফুজুল ইসলাম ভুঁইঞা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য খালাস ও অফিশিয়াল কার্যক্রম শুরু করেন তারা। প্রতিদিন বেলা ৩টা পর্যন্ত আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। প্রতিদিনের গাড়ি প্রতিদিনই পণ্য খালাস করে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতেরও সিদ্ধান্ত হয়। তবে ভারতীয় জনতার বাধায় কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় এখনো পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে সেটি জানা যায়নি।

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (এসি) সৌমেন কুমার চাকমা জানান, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ শুরু করেছিলেন। ব্যবসায়ীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফাইলপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। তবে চালুর পর পরই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন পরবর্তী কার্যক্রম কবে, কীভাবে শুরু হবে সেটি তাত্ক্ষণিক জানাতে পারেননি তিনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *