৭.১ শতাংশই ব্যয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়

বিশ্বজুড়েই বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা, খরা, দাবানল ও জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বাজেটের বড় একটি অংশই চলে যাচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায়। চলতি শতকের শেষ নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের এসব প্রভাব মোকাবেলায় ব্যয় হবে মার্কিন ফেডারেল বাজেটের ৭ দশমিক ১ শতাংশ। বর্তমানের হিসাবে এটি ২ ট্রিলিয়ন বা লাখ কোটি ডলারের সমান। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রথম মূল্যায়নে এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট অ্যাসেসমেন্টের (ওএমবি) বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার উপকূলীয় দুর্যোগে ত্রাণ, বন্যা, ফসল ও স্বাস্থ্যসেবা বীমা, দাবানল দমন ও ফেডারেল সুবিধাগুলো থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ১২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে পারে।

ওএমবির জলবায়ু ও বিজ্ঞান কর্মকর্তা ক্যান্ডেস ভ্যালসিং ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড্যানি ইয়াগান একটি ব্লগ পোস্টে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট বন্যা, খরা, উচ্চ তাপপ্রবাহ, দাবানল ও হ্যারিকেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং মার্কিন নাগরিকদের জীবনসহ দেশজুড়ে সম্প্রদায় ও খাতগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যদি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতের ক্ষতিগুলো বর্তমানের ক্ষতিকে ছাড়িয়ে যাবে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে রেকর্ড তাপপ্রবাহ ও খরা দুটি বিশাল দাবানলের জন্ম দেয়। দাবানলটি ক্যালিফোর্নিয়া ও ওরেগনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি উভয় অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে বৃহত্তম ছিল। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমের কিছু অংশে মারাত্মক আকার ধারণ করা খরা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকা কিংবা আরো খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক বছরে বন্যা ও হ্যারিকেনে নেব্রাস্কায় অফুট এয়ার ফোর্স বেজ এবং ফ্লোরিডার টিন্ডাল এয়ার ফোর্স বেজসহ কয়েকশ কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ওএমবি জানিয়েছে, বর্ধিত দাবানল ফেডারেল অগ্নি নির্বাপণ ব্যয়কে বার্ষিক ১৫৫ কোটি ডলার থেকে ৯৬০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে পারে। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়ায় প্রায় ১২ হাজার ২০০ ফেডারেল বিল্ডিং ও অবকাঠামো প্লাবিত হতে পারে। এ ক্ষতির প্রতিস্থাপন ব্যয় প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হার কমানোর জন্য অপর্যাপ্ত নীতি ও পদক্ষেপের কারণে শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তর থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি গতিতে বাড়বে।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময় জো বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আগ্রাসী পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তাকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও দেখা হয়েছিল। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপকে ধীর করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জো বাইডেনকে জ্বালানি তেল উত্তোলনে সমর্থন এবং ইউরোপে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি বাড়াতে বাধ্য করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ নামের বিলটিও সিনেটে বিরোধিতার মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানিকে সহায়তা দেয়ার জন্য বিলটিতে শত শত কোটি ডলারের তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।

জো বাইডেন গত মাসের শেষ দিকে আগামী অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারের বাজেট প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। ২০২৩ অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অর্থের পরিমাণ ২০২১ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *