৭ মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্য অনুদ্ঘাটিত

বেনাপোল কাস্টম হাউজের লকার খুলে প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। এমনকি খোয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী সিআইডি পুলিশ বলছে, খোয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধারে তারা কাজ করছে। এর সঙ্গে কাস্টমসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকার আলামত তারা পেয়েছে। কেননা কামস্টমের সহযোগিতা ছাড়া সেখানে চুরি সম্ভব নয়।

জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে চোরাচালানিদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ জমা রাখা হয় কাস্টম হাউজের লকারে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সকালে লকার থেকে চুরি হয় প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ। তবে লকারে থাকা আরো স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য সম্পদ অক্ষত অবস্থায় ছিল। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এখনো দাপটের সঙ্গে রয়ে গেছে বহিরাগতরা। কাস্টম হাউজে প্রবেশ গেট, পণ্যগুদামের নিয়ন্ত্রণে এমনকি অফিশিয়াল কাজ করতে দেখা যায় বহিরাগতদের।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজন সিপাইসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তারা হলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল, কাস্টমস সিপাই পারভেজ খন্দকার, এনজিও কর্মী আজিবর, মহব্বত, সুরত আলী, টিপু সুলতান ও আলাউদ্দীন। এসব এনজিও কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে মাস্টাররোলে কাজ করে আসছিলেন। ‘কাস্টমসের যে স্থানে লকার ছিল, সেখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী থাকেন না। পরে আজিবরকে আটক দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

কাস্টমস সূত্র জানায়, কাস্টম হাউজের ওই লকারে জব্দকৃত ৩০ কেজি স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা, কষ্টিপাথরসহ মূল্যবান দলিলপত্র ছিল। সেখান থেকে ১৯ কেজি ৩৮৫ গ্রাম স্বর্ণ কম পাওয়া গেছে।

এত নিরাপত্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চুরি হলো? ক্যামেরা ফুটেজ দেখে চোর চক্রকে শনাক্ত করা গেছে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে কাস্টম কর্মকর্তারা বলেন, টানা তিনদিন সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। যে কারণে সিসি ফুটেজ দিয়ে চোর চক্রকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার নিরাপত্তার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চোর ধরা কোনো কঠিন কাজ নয়। অথচ সাত মাসেও রহস্য অজানা থেকে গেল। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের এত বড় সম্পদ যারা অবহেলায় রেখেছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এছাড়া কাস্টমসে অবৈধ প্রবেশ রোধ করতে হবে। প্রয়োজনে রেজিস্টার ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সিস্টেম চালু করা যেতে পারে।

ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, কাস্টমসের অবহেলার কারণে সরকারের এ সম্পদ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন থেকে সতর্ক হওয়া দরকার। অপরাধীকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে আগামীতে এমন ঘটনা আবারো ঘটবে। তাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে।

বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. সৈয়দ নিয়ামুল ইসলাম জানান, কাস্টমসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত ডিসেম্বরে রিপোর্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জমা দিয়েছে। সেখানে আমরা কিছু পাইনি। বিষয়টি এখন সিআইডি তদন্ত করছে। প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত ছাড়া এর সঙ্গে জড়িতদের বের করা কঠিন।

এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সিআইডি যশোরের পরিদর্শক মো. জাকির হোসাইন জানান, মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা আজিবর ও শাকিল নামে দুজনকে আটক করেছি। সিসিটিভিতে শাকিলকে সেখানে রাতে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে খোয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধারে আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, গোডাউন ইনচার্জের চাবি দিয়ে লকার খোলা হয়েছে। স্বর্ণগুলো একটি কেবিনেট ফাইলে ছিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *