চট্টগ্রামে প্রথম পানি পাবে সন্দ্বীপের ৫০০ পরিবার

নগরের বাইরে চট্টগ্রামে প্রথম উপজেলা হিসেবে সুপেয় পানি সরবরাহ শুরু হচ্ছে সন্দ্বীপে। সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ উপজেলায় পানি সরবরাহে নলকূপ বসানো, পাম্প হাউজ নির্মাণ ও পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে সন্দ্বীপ পৌর এলাকার ৫০০ পরিবার বিশুদ্ধ পানির আওতায় আসবে। সব কাজ শেষ, এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।

চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগরে ওয়াসার পানি বিশুদ্ধকরণ ও বিতরণকরণ প্লান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। আগে গ্রামাঞ্চলে সুপেয় পানি সংকট না থাকলেও নগরায়ণের প্রভাবে এখন সেখানেও সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি সংকট রয়েছে। এসব সমস্যা নিরসনে গ্রামাঞ্চলে বিশেষত পৌর এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভূগর্ভস্থ গভীর নলকূপ ব্যবহারের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলার সব উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু হবে।

সন্দ্বীপ ছাড়াও বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও মিরসরাইয়ে পানি সরবরাহে আরো চারটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সন্দ্বীপের চেয়ে এসব উপজেলায় আরো বড় আকারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বাঁশখালীতে উৎপাদক নলকূপ বসিয়ে, মিরসরাইয়ে মহামায়া লেকের পানি, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে সাঙ্গু নদীর পানি বিশুদ্ধ করে পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ চার পৌরসভার প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ফটিকছড়ির নাজিরহাট ও মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরসভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো দুটি বিশুদ্ধ পানির প্রকল্প হাতে নেয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সুপেয় পানি সরবরাহে সন্দ্বীপ পৌর এলাকায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটি উদ্বোধন হলে সন্দ্বীপ পৌরসভার ৫০০ পরিবার প্রথম ধাপে বিশুদ্ধ পানির আওতায় আসবে। প্রকল্পের অধীনে সন্দ্বীপে এরই মধ্যে নলকূপ বসানো, পাম্প হাউজ নির্মাণ ও পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিমাণ কমে এলে প্রকল্পটির উদ্বোধন প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন রায় বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথম উপজেলা হিসেবে সন্দ্বীপ পৌরবাসী বিশুদ্ধ পানি পেতে যাচ্ছে। প্রকল্পের সব ধরনের কাজ শেষ। শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। সাড়ে ৪ কোটি টাকার সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো চারটি উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির প্রকল্প হবে। ধাপে ধাপে চট্টগ্রামের সব পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।

সূত্র আরো জানায়, সন্দ্বীপে এ প্রকল্পের আওতায় ৬৫ দশমিক ৯ কিউসেক ক্যাপাসিটির তিনটি পাম্প হাউজ বসানো হয়েছে। ১ হাজার ২৫০ হর্স পাওয়ারের তিনটি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রায় ২৬ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। প্রথম ধাপে প্রায় ৫০০ পরিবার বিশুদ্ধ পানির সংযোগের আওতায় আসবে। পৌরসভা এসব সংযোগের বিনিময়ে চার্জ আদায় করবে। চাহিদা থাকলে পৌর কর্তৃপক্ষ চাইলে আরো সংযোগ বাড়াতে পারবে।

সন্দ্বীপ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ টিটু বলেন, প্রকল্পটি সন্দ্বীপ পৌরবাসীর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। কারণ সব সময় এখানে লবণাক্ত পানি পাওয়া যায়। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হলে নলকূপ নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বাড়িতে গভীর নলকূপ না থাকায় যে শ্যালো নলকূপগুলো আছে, সেখানে আর্সেনিকসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। আমরা প্রাথমিকভাবে ৪৫০-৫০০ পরিবারে সংযোগ দেব। আমাদের যে তিনটি পাম্প আছে, সেগুলো প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার লিটার পানি তুলতে পারে। পানি সরবরাহ শুরু হলে মানুষ পানিবাহিত রোগ থেকেও রক্ষা পাবে।

সন্দ্বীপে সুপেয় পানি সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বণিক বার্তাকে বলেন, মেট্রোপলিটন শহরগুলো ছাড়া সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে সুপেয় পানি সরবরাহ হতো না। সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচির কারণে উপজেলা পর্যায়েও নগরায়ণের ছোঁয়া লেগেছে। এ কারণে গ্রামাঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে সুপেয় পানি সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পৌর এলাকার বাসিন্দারা এ প্রকল্পের সুফল পেলেও ধারাবাহিকভাবে পুরো উপজেলায় প্রকল্পটির সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগর উপকূলের জনপদ হওয়ায় সন্দ্বীপে ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা পাওয়া যায়। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হলে এ এলাকার নলকূপগুলোও অকেজো হয়ে যায়। প্রতিটি বাড়িতে গভীর নলকূপ না থাকায় সেলো নলকূপের কারণে আর্সেনিকের ঝুঁকি থাকে। এ কারণে উপজেলা পর্যায়ে পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রথম কার্যক্রমটি সন্দ্বীপে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে পানি সরবরাহ শুরু হলে মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাবে। পানিবাহিত যেসব রোগ আছে, সেখান থেকেও রক্ষা পাবে মানুষ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *