বান্দরবানে মৌসুমি ফল বেচাকেনায় ভরসা সেলফোন

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মৌসুমি ফল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন বান্দরবানের চাষীরা। টানা ২১ দিন লকডাউনের কারণে হাটবাজারগুলোয় ক্রেতা আসতে না পারায় লোকসান দিতে হয় তাদের। অবশেষে লোকসান ঠেকাতে সেলফোনেই ভরসা রাখেন সেখানকার ক্রেতা-বিক্রেতারা। এতে সফলতাও আসে। বর্তমানে সেলফোনই তাদের ব্যবসার একমাত্র মাধ্যম।

করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন জেলার ছয় উপজেলার ফল ও সবজিচাষীরা। কারণ প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী শষ্যক্ষেত বা ফলের বাগানে সরাসরি গিয়ে, ফসলের আকার-মান, ওজন যাচাই করে চাষী ও ব্যবসায়ীর মধ্যে পণ্যের দরদাম ঠিক হয়। চলতি মৌসুমে করোনাভাইরাসের কারণে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সরাসরি যোগাযোগের ওই ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় সেলফোনের মাধ্যমেই পণ্যের বিবরণ দিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮৯৮ হেক্টর কৃষিজমিতে ৩২ হাজার ৪৪৯ টন গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ৪৬ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে ৮৭ হাজার ৫৩৭ টন মৌসুমি ফল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ৭৩ হাজার ৫৬০ টন আম ও ৪ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমিতে ৮৭ হাজার ৪৮০ টন আনারস উৎপাদন হয়েছে।

শ্যারণপাড়া এলাকায় বাসিন্দা লালরুয়াত সিয়াম বম জানান, তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল ১২ হাজার গাছের বাগানে এ বছরই প্রথম নয় হাজার গাছে আনারস ধরেছে। লকডাউনের কারণে স্থানীয় ও কোনো পর্যটক এলাকায় আসেননি। তাই নিজ বাগানের ফল বেপারিদের কাছেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কয়েক দিন আগে কেরানীহাট, দোহাজারী ও চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়।

এরমধ্যে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নয় হাজার আনারসের দরদাম সেলফোনেই ঠিক হয়। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। নেটওয়ার্ক থাকায় সেলফোন যোগাযোগের মাধ্যমে কম দামে হলেও বিক্রি হচ্ছে, যা পেকে পচে যাওয়ার আর্থিক ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বান্দরবান উপপরিচালক ড. একেএম নাজমুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, এ বছর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে উৎপাদিত সবজি বিপণন বিঘ্নিত হয়। তবে তা পুষিয়ে নিতে সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণে অন্তর্ভুক্তিসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া জেলায় মার্কেটিং সিস্টেম ও মার্কেট চেইন নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিপণনে বিশেষ কোনো সমস্যা থাকবে না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *