ঋণের চাপে নুয়ে পড়েছে ভারতের টেলিকম বাজারে একসময় শীর্ষ অবস্থানে থাকা ভারতী এয়ারটেল। ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তাই ঋণের খড়্গ কমানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য ঝুঁকছে বিলগ্নীকরণের দিকে। এরই অংশ হিসেবে টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি তাদের মরিশাস বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা যুক্তরাজ্যের হেলিয়স টাওয়ারস কোম্পানির ২ দশমিক ৩ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করেছে। এয়ারটেল মরিশাসের নেটওয়ার্ক বিভাগ আইটুআই ৩ কোটি ৬৯ লাখ ইউরো বা প্রায় ৩৪৭ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে এ হিস্যা বিক্রি করেছে। খবর ইটি টেলিকম।
ভারতের টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঋণের চাপে হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির শীর্ষ টেলিকম প্রতিষ্ঠান মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন জিও ইনফোকম থেকে শুরু করে ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া সবাই ঋণের ভারে জর্জরিত, যা উত্তরণের জন্য সবাই এখন বিলগ্নীকরণের দিকে ঝুঁকছে। এ সুযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি মার্কিন টেলিকম জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানসহ বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের বাজারে জায়গা করে নিতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। বিলগ্নীকরণে তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জিও প্লাটফর্ম ও ভারতী এয়ারটেল। এসব বিনিয়োগের মধ্যেই নতুন করে ভারতী এয়ারটেল তাদের মরিশাস বিভাগের অধীনে থাকা হিলিয়াস টাওয়ারসের মালিকানা বিক্রি করেছে।
যদিও এ বিষয়ে ভারতী এয়ারটেলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি ইটি টেলিকমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ বিলগ্নীকরণের বিষয় জানে এমন কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এটি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করবে ভারতী এয়ারটেল।
গত মার্চে শেষ হওয়া প্রান্তিক পর্যন্ত ভারতী এয়ারটেলের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ২৫১ কোটি রুপিতে। এছাড়া এর বাইরে রয়েছে সংবিধিবদ্ধ বকেয়া পরিশোধের বিরাট অর্থ। সব মিলিয়ে বড় ঋণের চাপে রয়েছে এক সময়ে শীর্ষে থাকা ভারতী এয়ারটেল। আর এজন্যই এখন ভারতে বিলগ্নীকরণের পাশাপাশি মরিশাস বিভাগের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের টাওয়ার কোম্পানি হেলিয়স টাওয়ারসের ২ কোটি ৩১ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছে ভারতী এয়ারটেল। যার প্রতি ইউনিট বিক্রি হয়েছে ১ দশমিক ৬ ইউরোতে, যা পরিমাণের হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির মোট হিস্যার মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
এদিকে এমন একটি সময়ে ভারতী এয়ারটেল বিদেশে থাকা প্রতিষ্ঠানটির অধীনের মালিকানা বিক্রি করছে, যখন নিজ দেশেও বিলগ্নীকরণ চলছে। গত মাসেই ভারতী টেলিকমের অধীনস্থ ভারতী এয়ারটেল বৈশ্বিক বাজারে বহুজাতীয় বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মালিকানা বিক্রি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ব্ল্যাকরক, সেগান্তি ক্যাপিটল, নর্জেজ ব্যাংক ও কি স্কয়ার ক্যাপিটালের নাম। এছাড়া দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে এইচডিএফসি মিউচুয়াল ফান্ড ও এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের মতো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ভারতী এয়ারটেলের ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করা হয়েছে, যা থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় এসেছে ৮ হাজার ৪৩৩ কোটি রুপি বা ১১৫ কোটি ডলার।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে মরিশাস বিভাগের মাধ্যমে ২৫ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপির একটি তহবিল সংগ্রহ করে ভারতী এয়ারটেল। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে এ তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এরও আগে নেটওয়ার্ক আইটুআইয়ের মাধ্যমে ৭৫ কোটি ডলার বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি রুপির একটি তহবিল সংগ্রহ করে ভারতী এয়ারটেল।