হেডফোন কেনার আগে…

কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি দূর করে কিছুটা প্রশান্তি দিতে পারে সংগীত। পছন্দের ট্র্যাক শোনার জন্য ভালো মিউজিক প্লেয়ারের পাশাপাশি স্পিকার বা হেডফোন ভালো হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে কী ধরনের হেডফোন কিনবেন? দেশের বাজারে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হেডফোন পাওয়া যাচ্ছে। হেডফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল করা জরুরি, সেগুলো নিয়ে আয়োজনের আজ শেষ পর্ব—

ইয়ারবাড/ইন-ইয়ার হেডফোন: ইয়ারফোন বলতে সাধারণত আমরা ইয়ারবাড বুঝি। এটি কানের চ্যানেলের মধ্যে রেখে সংগীত শুনতে হয়। অন্যদিকে ইন-ইয়ার হেডফোন কানের চ্যানেলের কিছুটা ভেতরে চাপ দিয়ে রাখতে হয়। ইন-ইয়ার হেডফোনে নয়েজ ক্যান্সেলেশন ফিচার থাকায় বাইরের শব্দ প্রবেশ করে না এবং তুলনামূলক ভালো ও পরিষ্কার ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায়। তবে বেশিক্ষণ রাখলে কানে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অন-ইয়ার/ওভার দ্য ইয়ার হেডফোন: অন-ইয়ার হেডফোন কানের ওপরে বসিয়ে সংগীত উপভোগ করা যায়। অন্যদিকে ওভার-দ্য-ইয়ার হেডফোন পুরো কান ঢেকে রাখে। উভয় ধরনের হেডফোনে ভালো ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় এবং উভয় ডিভাইসই কানের জন্য আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। তবে ওভার-দ্য-ইয়ার হেডফোনের বড় সুবিধা হলো এর মাধ্যমে বাইরের শব্দ ও সংগীতের সুর পৃথকভাবে শুনতে পাওয়া যায়। তবে বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে কান গরম হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কানে কালসিটে দাগ ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

ক্লিপ/ওভার-দ্য-নেক হেডফোন: ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সময় সংগীত উপভোগের ক্ষেত্রে ক্লিপ এবং ওভার-দ্য-নেক হেডফোন দারুণ হতে পারে। উভয় ধরনের হেডফোন চলন্ত অবস্থায় ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা। ক্লিপ হেডফোন তারবিহীন হওয়ায় তুলনামূলক কম ঝামেলাপূর্ণ। তবে অনুশীলনে ভালো সমর্থন দেয় ওভার-দ্য-নেক হেডফোন।

শব্দের মান:

হেডফোন বাছাইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রদানকৃত শব্দের মান। এর মাধ্যমেই একটি হেডফোনের ভালো-মন্দ বিচার করা চলে। হেডফোনের শব্দের মান নির্ণয় করা হয় তিনটি মাপকাঠিতে। সেনসিটিভিটি; একটি হেডফোন কতটা লাউড শব্দ প্রদান করে। শ্রবণযন্ত্রের নিরাপত্তা ইস্যুতে খুব বেশি জোরালো শব্দ উৎপাদন করে, এমন হেডফোন বাছাই করা উচিত নয়। স্বাভাবিক কাজের জন্য সাধারণত ১০২ ডেসিবল এককের কাছাকাছি থাকা উচিত। ড্রাইভারের আকার; হেডফোনের ড্রাইভারের আকার যত বড় বেজ তত বেশি পাওয়া যায়। তবে অনেকেই বড় ড্রাইভারের চেয়ে লোয়ার স্কেলের সংগীত পছন্দ করেন। এটি ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। এক্ষেত্রে ৯ থেকে ১৬ মিলিমিটার ব্যাসের ড্রাইভার সংবলিত হেডফোন নেয়া শ্রেয়।

ইম্পিডেন্স: সাধারণ অবস্থায় কম ইম্পিডেন্স বিশিষ্ট হেডফোন ঝুঁকিমুক্ত। এর রেঞ্জ কমপক্ষে ১২ ওহম থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ ওহমের মধ্যে থাকা ভালো। ইয়ারফোনের জন্য ১২ ওহম আদর্শ। ১৬ ওহমের ইয়ারফোন দ্রুত নষ্ট হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। আগের দিনের ডিভাইসে ১৬ ওহম শব্দ উৎপাদন হতো। এখনকার ডিভাইসগুলোয় তা হেডফোনের সঙ্গে মানিয়ে ১২ ওহমে সমন্বয় করে নেয়া হয়।

ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স: যে হেডফোনের ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ যত বিস্তৃত তার সক্ষমতা তত বেশি ধরা হয়। মানুষ ২০ হার্টজ থেকে ২০ হাজার হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি পর্যন্ত শব্দ শুনতে সক্ষম। তবে কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ১৫ হার্টজে শব্দ শোনার ঘটনাও রয়েছে। সংগীতের সবচেয়ে বেশি বেজ ৪০ থেকে ১০০ হার্টজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ।

কানেক্টর টাইপ: সাম্প্রতিক সময়ের বেশির ভাগ ইয়ারফোনে ৩.৫ মিলিমিটার কানেক্টর রয়েছে। এগুলোর কিছু ইস্পাতের, কিছু ব্রোঞ্জের তৈরি। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো পারফরম্যান্স দেয় স্বর্ণের তৈরি কানেক্টর। আর সবচেয়ে খারাপ ইস্পাতের।

ম্যাগনেটের ধরন: বিভিন্ন ইয়ারফোনে বিভিন্ন রকম ম্যাগনেট দেয়া থাকে। তবে নিওডাইমিয়ামের তৈরি ম্যাগনেট সবচেয়ে বেশি সেনসেটিভ ও অ্যাকুরেট সাউন্ড প্রদান করে বলা হয়। হেডফোন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে এ ধরনের ম্যাগনেট বিশিষ্ট হেডফোন নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *