কাঁচাপাট মজুদের পরিমাণ ও সময়সীমা নির্ধারণ

অসাধু ও সনদবিহীন ব্যবসায়ীদের কারণে বাজারে কাঁচাপাটের সংকট দেখা দিয়েছে। কাঁচাপাট সংকটে উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের পাটকলগুলো। এ অবস্থায় কাঁচাপাট মজুদের পরিমাণ ও সময়সীমা নির্ধারণ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এক হাজার মণের বেশি কাঁচাপাট এক মাসের বেশি সময় মজুদ করা যাবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাট অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)।

মন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রয়োজনীয় কাঁচাপাট সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ধারা বেগবান করার লক্ষ্যে কাঁচাপাটের ডিলার বা আড়তদাররা এক হাজার মণের বেশি কাঁচাপাট এক মাসের বেশি সময় ধরে মজুদ করতে পারবে না। সম্প্রতি দেশে কাঁচাপাট সংকট তৈরির কারণে পাটকলগুলো উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কাঁচাপাটের সরবরাহ নিশ্চিতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এজন্য লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাঁচাপাট ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ হতে বিরত রাখা হবে। ভেজা পাট ক্রয়-বিক্রয় রোধ করা, বাজারে কাঁচাপাটের সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাট অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

গতকালের বৈঠকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. জাহিদ মিয়াসহ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, পাট উৎপাদনে সবচেয়ে বড় বাধা বীজের আমদানি নির্ভরতা। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি বীজ আমদানি করতে হয়। তবে চলতি পাট মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, পাট চাষ নিশ্চিতকরণে বীজ সরবরাহ সঠিক রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মানসম্মত পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পাঁচবছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। প্রয়োজনীয় পাটবীজ সংগ্রহে আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না। এ পাট মৌসুম থেকে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন শুরু হবে। ধাপে ধাপে তা আগামী পাঁচ বছরে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে।

জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৬৬৮ দশমিক ১১ কোটি ডলার আয় করেছে। এ অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। আর তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৯ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। ফলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন এবং মানসম্মত পাট উৎপাদনে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি দেশের ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর প্রত্যক্ষভাবে ১ লাখ ৫৩ হাজার পাটচাষী ও পরোক্ষভাবে ৬ লাখ ১২ হাজার কৃষক ও পরিবারের সদস্য উপকৃত হচ্ছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *