এশিয়া প্যাসিফিকে রাজস্ব ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলার

কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ডিজিটাল ও ব্যবসায়িক নির্ভরতা অর্জনে ডাটা ও বিশ্লেষণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ব্যবসা জোরদারে বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্সে বিনিয়োগ বাড়াতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছর এশিয়া প্যাসিফিকে বিগ ডাটা অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স (বিডিএ) খাতের রাজস্ব আয় ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।

বিগ ডাটা কী? বিভিন্ন মাধ্যমের সহায়তায় মানবজাতির সব তথ্যকে এক করলে ঠিক কী পরিমাণ ডাটা হবে, তা কি জানা সম্ভব? নিখুঁতভাবে জানা না গেলেও কিছুটা আন্দাজ করা যায়। এখন ইন্টারনেট, বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াসহ প্রযুক্তির সহযোগিতায় বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য বা ডাটার পরিমাণ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষ যে বিপুল পরিমাণ ডাটা তৈরি করছে, তা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনযাপনের মান উন্নয়নে কাজে লাগানো খুব সহজ কাজ নয়। বিপুল পরিমাণ ডাটাকে একত্রে বলা হয় বিগ ডাটা। এসব ডাটা বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিবাচক কোনো কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াটিকে বলা হচ্ছে বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্স।

আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বিগ ডাটা প্রযুক্তি ও পরিষেবা সম্পর্কিত রাজস্বে বার্ষিক ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। অর্থাৎ আগামী চার বছরে বিডিএ খাতের রাজস্ব ৪ হাজার ১৯০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।

আইডিসির এশিয়া প্যাসিফিকের সহযোগী বাজার বিশ্লেষক রিতিকা শ্রীবাস্তব এক বিবৃতিতে বলেন, সর্বশেষ কভিড-১৯ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭৪ শতাংশ উদ্যোক্তা বিডিএ সমাধানগুলোতে একই স্তরের বিনিয়োগ রাখা কিংবা আগামী বছরগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইচ্ছা পোষণ করেছেন। কারণ কভিড-১৯ মহামারী সংকটের সময় ডিজিটাল আস্থা ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে ব্যবসায় বিডিএ সমাধানগুলো প্রয়োগ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিএ বিনিয়োগগুলোকে অনুকূল করতে উদ্যোক্তারা পাবলিক ক্লাউড বিস্তারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। ফলে পূর্বাভাসের এ সময়কালে এটি ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত বছর সামগ্রিক বিডিএ খাতে বিনিয়োগে শীর্ষে ছিল ব্যাংকিং খাত। আগামীতে এ খাতের যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধি হার আরো বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাত আর্থিক, লেনদেন ও গ্রাহকের ডাটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সম্ভাবনা তুলে ধরছে।

ডাটা বিশ্লেষণ থেকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা অর্জনকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হলো টেলিযোগাযোগ। এ খাতের গ্রাহক, বিক্রি ও বিপণন সম্পর্কিত অন্তর্দৃষ্টি আবিষ্কারে বিডিএ সমাধান বড় ভূমিকা রাখছে। এ দুই খাত বর্তমান বিডিএ আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে। অর্থের হিসাবে যা গত বছর ৬১০ কোটি ডলার ছিল। রাজ্য ও স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী পূর্বাভাসের এ সময়কালে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধির হার নিয়ে বিডিএ সেবায় ব্যয়ে অবদান রাখবে।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বিডিএ সমাধানের জন্য বৃহত্তম বাজার হিসেবে চীন গত বছর অবস্থান ধরে রেখেছে। বিডিএ সম্পর্কিত ক্রয়ের জন্য ব্যাংকিং এবং রাজ্য ও স্থানীয় সরকার চীনা বাজারের দুই বৃহত্তম চলক। গত বছর এ দুই খাত এক-চতুর্থাংশ আয়ে অবদান রেখেছে। এছাড়া ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো বিডিএ সমাধান গ্রহণে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দেশগুলোর স্টার্টআপ ও ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো বিডিএ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে সেখানে বার্ষিক ১৫ শতাংশের চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইডিসি এশিয়া প্যাসিফিকের বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্স রিসার্চ ম্যানেজার জেসি ডানকিং কাই বলেন, কভিড-১৯ মহামারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অপারেশনাল স্থিতিস্থাপকতা এবং রাজস্ব বৃদ্ধি সমর্থনে ডাটা-চালিত উপায় অবলম্বন করার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা মনে করছি, চলমান মহামারীর কারণে ঘটা পরিবর্তনগুলো দেশ ও শিল্পের ডিজিটাল অর্থনীতিতে টিকে থাকতে আগামী বছরগুলোতে ডাটা ও বিশ্লেষণ প্রযুক্তির আরো চাহিদা তৈরি হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *