হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবসার ভবিষ্যৎ কোন পথে?

 চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি বর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইভজি নেটওয়ার্ক চুক্তি হুয়াওয়ের হাতছাড়া হওয়ার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসার ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর টেলিকম লিড।

বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে। কয়েক প্রান্তিক আগেও এর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ছিল নজরকাড়া। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ এবং মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে নানা অযৌক্তিক অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি রুখতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বর্তমানে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসা বিভাগকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামবিষয়ক চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এসব চুক্তি হুয়াওয়ের সঙ্গে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তুলনামূলক ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বী নকিয়া ও এরিকসন বাগিয়ে নেয়।

হুয়াওয়ে টেকনোলজিস গত বছর শেষে টেলিকম ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব আয় ২৯ হাজার ৬৭০ কোটি চাইনিজ ইউয়ানে পৌঁছানোর তথ্য দিয়েছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বড় কোনো ফাইভজি নেটওয়ার্ক চুক্তির ঘোষণা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। হুয়াওয়ের মোট রাজস্বের ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ টেলিকম ব্যবসা বিভাগ থেকে আসে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ টেলিকম বাজারে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বিক্রি ও প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি সরবরাহের সুযোগ হারিয়েছে হুয়াওয়ে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জন্য ১৮ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল হুয়াওয়ে। সে অনুযায়ী, গত বছরজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় ৮৫ হাজার কোটি ইউয়ানে (১২ হাজার ১৭২ কোটি ডলার) পৌঁছানোর কথা ছিল। বাস্তবে তা অর্জন সম্ভব হয়নি। রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে গত বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা।

বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে। নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বাজারে এখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নকিয়া ও এরিকসন। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে হুয়াওয়ে চাপে থাকায় ব্যবসায় সুবিধা নিচ্ছে নকিয়া ও এরিকসন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে টেলিকম কোম্পানি বেল কানাডা ও টেলাস নিজেদের ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপনে ফিনল্যান্ডভিত্তিক নকিয়া ও সুইডেনভিত্তিক এরিকসনের সঙ্গে চুক্তিতে গেছে। অথচ এ দুই প্রতিষ্ঠানের ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল হুয়াওয়ে। এর আগে কানাডা সরকারের পক্ষ থেকেও ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে ফাইভজি প্রকল্প থেকে হুয়াওয়েকে বাদ না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। কিন্তু বেল কানাডা ও টেলাসের নকিয়া ও এরিকসনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় বিষয়টি এখন অনেকটা স্পষ্ট যে কানাডায় ফাইভজি প্রকল্পে সুযোগ থাকছে না হুয়াওয়ের।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, হুয়াওয়ে শুধু বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতাই নয়; পঞ্চম প্রজন্মের আল্ট্রা-হাই-স্পিড মোবাইল নেটওয়ার্ক ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণেও নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণ এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। হুয়াওয়ে কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে এককভাবে পশ্চিম ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার প্রায় ২৩০টি শহরে সার্ভিল্যান্স সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হুয়াওয়ের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জামে সূক্ষ্ম ব্যাকডোর আছে। নিজেদের সরঞ্জামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে ব্যাকডোরের মাধ্যমে সরাসরি চীন সরকারের হাতে পৌঁছানো হয়। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে পণ্য সরবরাহ করায় গত বছর হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে ক্রমবর্ধমান একটি প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি থামিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজেদের পণ্য উন্নয়নে মার্কিন অংশীদারদের কাছ থেকে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্য কেনা বন্ধ হয়ে যায় হুয়াওয়ের। এছাড়া হুয়াওয়ের পণ্য ক্রয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বাধা দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েডের সমর্থন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল গুগল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *