হঠাৎ করে সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ

স্প্যানিশ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মাণের দায়িত্ব পান রিপোর্টার অ্যাঞ্জেলা ভিদাল আর তার ক্যামেরাম্যান পাবলো। তারা বার্সেলোনার একটি লোকাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যান শুটিংয়ের জন্য। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একজন বৃদ্ধ নারীর ফোন পান। বিষয়টি রেকর্ড করতে রিপোর্টার আর ক্যামেরাম্যান রওনা হন দুজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর সঙ্গে। কিন্তু যে অ্যাপার্টমেন্টে তারা উদ্ধার অভিযানে যান, সেই অ্যাপার্টমেন্টের বেশির ভাগ মানুষই এক অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হিংস  হয়ে উঠছে। তারা একে অন্যের রক্ত পান করা শুরু করে দিয়েছে। এখন ডকুমেন্টারি বানানোর চেয়ে নিজের জীবন বাঁচানো বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে অ্যাঞ্জেলাদের জন্য।

এমনই গল্প আর টান টান উত্তেজনায় ঠাসা রোমাঞ্চ নিয়ে ‘রেক’ চলচ্চিত্রের কাহিনী। রেক শব্দটি মূলত ইংরেজি রেকর্ডিংয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ। ফাউন্ড ফুটেজ হরর ঘরানার এ ছবিটি এ জনরার অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল ছবি। এমনকি সেরা ১০০টি হরর ছবির তালিকায় এর স্থান ৬০তম। পুরো ছবিই দেখানো হয়েছে একজন রিপোর্টার ও তার ক্যামেরাম্যানের চোখ দিয়ে।

ছবির গল্পে দেখা যায় অ্যাঞ্জেলা আর পাবলো যখন দুজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী অ্যালেক্স ও মানুর সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন, তখন সেখানে আরো দুজন পুলিশ অফিসার তাদের সঙ্গে যোগ দেন। যখন তারা অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেন তখন সেই বৃদ্ধ নারী তাদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালান। এমনকি একজন পুলিশ অফিসারের ঘাড়ে কামড়ে দিয়ে রক্ত পান করতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থাকা বাকি পুলিশ আর সেনা সদস্যরা মিলে পুরো বিল্ডিংকে সিল করে দেন যেন কেউ ভেতরে যেতেও না পারে আবার আক্রান্ত কেউ বাইরেও না আসতে পারে। ভেতরে সবার সঙ্গে আটকে পড়েন রিপোর্টার আর তার ক্যামেরাম্যানও।

পুলিশ অফিসারের ওপর এমন আক্রমণ দেখে পুরো অ্যাপার্টমেন্টের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বৃদ্ধার সঙ্গে লড়তে গিয়ে অ্যালেক্স সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে মারাত্মক আহত হন। এরপর সেই বৃদ্ধা একটি ছোট মেয়েকে খুন করেন। এ সময় অন্য পুলিশ অফিসার তাকে গুলি করতে বাধ্য হন। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে অ্যাঞ্জেলা আর পাবলো অ্যাপার্টমেন্টের অন্য বাসিন্দাদের সাক্ষাত্কার নিতে থাকেন। জেনিফার নামের একটি ছোট মেয়ের সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় তার মা ম্যারি জানান, জেনিফার কিছুদিন ধরে অসুস্থ। জেনিফারের কুকুরটাও একটু অসুস্থ।

বৃদ্ধার হাতে যে কজন আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তার উপস্থিত হন অ্যাপার্টমেন্টে। অবস্থা দেখে বলেন, র্যাবিসের মতো এক মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে আক্রান্তদের মধ্যে। অ্যাপার্টমেন্টের আশেপাশের কোনো অসুস্থ কুকুরের থেকেই রোগটি ছড়িয়ে থাকতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাঞ্জেলা বুঝে যান জেনিফারের কুকুরই সেই মহামারী বহন করেছে। এ সময় হঠাৎ করেই জেনিফার হিংস  আচরণ করতে শুরু করে। আবারো শুরু হয় আতঙ্ক। এর ওপর নতুন আতঙ্ক হিসেবে যোগ দেয় পাশের কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্টের আক্রান্ত লোকজনও। এবার যেন নরক ভেঙে পড়ে!

৭৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের এ ছবি মুক্তি পায় ২০০৭ সালের ২৩ নভেম্বর। জমি বালাগুয়েরো ও পাকো প্লাজার যৌথ লেখনী ও পরিচালনায় ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ম্যানুয়েলা ভেলাসকো (অ্যাঞ্জেলা), পাবলো রসো (পাবলো), ফেরান তেরাজা (মানু), ডেভিড ভেটি (অ্যালেক্স), ক্লাউডা সিলভা (জেনিফার), মারিয়া লানাও (ম্যারি) প্রমুখ। ছবিটি দর্শক ও সমালোচকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মাত্র ২ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত ছবিটি প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ডলার আয় করে বক্স অফিস থেকে। এই সাফল্যের রেশ ধরে ছবিটির বেশ কয়েকটি সিকুয়ালও নির্মাণ করা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *