অভিনয়ে থিতু হতে চাই

অভিনয়জগতে আসার খুব বেশি দিন হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে দর্শকদের মনে স্থান নিতে শুরু করেছেন। এবারের ঈদুল ফিতরে তার অভিনীত প্রায় ১৬টি নাটক প্রচারিত হয়েছে। যার কথা বলা হচ্ছে তিনি ছোট পর্দার অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। হালের নতুন মুখ। সম্প্রতি অভিনয়ে আসা, আগামীর পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে টকিজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন রাইসা জান্নাত

কেমন আছেন? কীভাবে সময় কাটছে?

সুস্থ আছি। এটাই এখন সবচেয়ে ভালো সংবাদ বলব। ঘরেই আছি। মাঝে মাঝে বিকালে বাসার নিচে একটু হাঁটাহাঁটি করি। এর বাইরে কোথাও যাওয়া হয় না। বই পড়ে, সিনেমা দেখে, গান করে, গান শুনে—এভাবেই কেটে যাচ্ছে।

আপনার অভিনয়ে আসার জার্নিটা সম্পর্কে একটু বলবেন?

শুরুতে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেয়ার ইচ্ছা ছিল না। ২০১৬ সাল থেকে টুকটাক টিভিসিতে কাজ করতাম। অনেকেই বলত নাটকে কাজ করতে। কিন্তু আমার কখনই মনে হয়নি নাটক করা উচিত। কীভাবে যেন ব্যাটে-বলে মিলে যায়। ২০১৭ সালে শাফায়েত মনসুর রানার নির্দেশনায় ‘আমরা আবার ফিরবো কবে’ নাটকে প্রথম কাজ করি। এরপর এক বছর কোনো কাজ করিনি। চরিত্র পছন্দ হতো না। মনে হতো নাটকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আমার ইচ্ছা ছিল না। পড়াশোনা করছিলাম। সেখানে বেশি মনোযোগ দিতে হতো। ২০১৮-এর শেষে আবার ভালো নাটক, চরিত্রের প্রস্তাব পাওয়া শুরু করি। বেশি সময় লাগেনি। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মানুষের চেনা-জানা হয়ে উঠতে শুরু করি। এরপর এসব নিয়ে আর চিন্তা করতে হয়নি। এখন তো পেশাদারিত্বের সঙ্গেই কাজ করছি।

আপনি বললেন, অভিনয়ে আসার ইচ্ছা ছিল না। তাহলে কী করার ইচ্ছা ছিল?

ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল সংগীতশিল্পী হওয়ার। আমি এ বছরই বিবিএ সম্পন্ন করেছি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে। অভিনয়ে না এলে সম্ভবত মাল্টিন্যাশনাল কোনো সেক্টরে চাকরি করতাম। অথবা অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপে কিছু একটা বেছে নিতাম।

অভিনয়জগতে যখন এসেই পড়লেন, এখনকার পরিকল্পনা কী?

অভিনয়ে আসার পর মনে হয়েছে এটা ছাড়া আমি অন্য কোনো ক্ষেত্রে হয়তো নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারব না। এখন অভিনয়ে থিতু হওয়ার ইচ্ছা। যতদিন দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাব ততদিন কাজ করে যেতে চাই। অন্য কিছু করার চিন্তা আপাতত মাথায় নেই। স্নাতকোত্তর করার ইচ্ছা আছে। কীভাবে সবকিছু সমানতালে করা যায় সে পরিকল্পনা করছি।

অভিনয়ে আসার পেছনে আপনার পরিবারের সমর্থন কেমন ছিল?

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আমার আম্মুর। টিভিসিতে আমাকে না জানিয়ে আম্মু আমার ছবি ড্রপ করেছিল। জানার পর বাসায় চ্যাঁচামেচি করি। আমার সবকিছুতেই ‘না’ করার স্বভাব রয়েছে। আম্মু সবসময় চাইত লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতাসহ আরো যেসব প্রতিযোগিতা হয় সেসবে যেন নাম দিই। কিন্তু আমি কখনই এসব বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম না। যখন কাজ শুরু করি তখন তো নিজেরই ভালো লাগা শুরু হয়। আমার পরিবার আমাকে অনেক সমর্থন করে।

নাটকের শুটিং শুরু হয়েছে। সামনে ঈদ। নতুন কাজের পরিকল্পনা আছে কি?

অনেক নির্মাতাই ফোন দিচ্ছেন। কিন্তু আমি মন থেকে এখনো চিন্তা করতে পারছি না। আমি তো পরিবারের সঙ্গে থাকি। আমার কিছু দায়িত্ব আছে। কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। সামনে ঈদ। এরই মধ্যে আমরা একটা ঈদ, পহেলা বৈশাখ মিস করেছি। আমি ভাবছি, উৎসব তো আসবেই। কিন্তু আমার বা পরিবারের কারো জীবন চলে গেলে সেটা ফেরত আসবে না। মন যেদিন বলবে সেদিনই কাজ করব।

করোনা কি আপনার কাজের ক্ষেত্রে খুব বেশিই বাধা তৈরি করেছে?

আমার ১৬টি নাটকের মধ্যে চার-পাঁচটি ঈদের জন্য করা। ঈদের কাজ শুরু করেছিলাম মার্চের শুরুতে। ১৮ মার্চের পর আর শুটিং করিনি। এর মাঝখানে বেশি কাজ করতে পারিনি। বেশির ভাগই ছিল পহেলা বৈশাখ ও অন্যান্য সময়ের কাজ। অনেক ভালো কাজের পরিকল্পনা ছিল। শিডিউলও নির্ধারিত হয়েছিল। আসলে কিছু করার নেই। সবার পরিকল্পনাই ভেস্তে গেছে। এক্ষেত্রে বলব, যতটুকু দর্শকদের দিতে পেরেছি তাতেই খুশি। তারা সেসব দেখে এতটা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন যেটা কখনই আশা করিনি। আমি বলব, খুব একটা ক্ষতি হয়নি।

করোনাকাল কেটে গেলে সবার আগে কী করতে চান?

শুটিং। কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় না রেখে শান্তিমতো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে চাই। এখন যারা শুটিং করছেন প্রত্যেকের মাথায় হয়তো করোনার বিষয়টি রয়েছে। আমরা তো ক্রিয়েটিভ কাজ করি। মাথায় এত কিছু রেখে সর্বোচ্চটা দেয়া কঠিন। আমি নিশ্চিত নই যে এখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে অভিনয় করতে পারব কিনা। ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব না। আমি চাই পরিস্থিতি ভালো হোক।

কাদের অভিনয় সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?

ছোটবেলা থেকেই লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর অনেক বড় ভক্ত। আমার তো তখন অভিনয়শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু যখন তার অভিনয় দেখতাম মনে হতো, ইস! যদি এ রকম অভিনয় করতে পারতাম। নিজে নিজে তার ডায়ালগ অনুশীলন করতাম। আমার অবচেতন মনে এগুলো ছিল। আমার মনে হয় অভিনয়ে আসার ক্ষেত্রে ডি ক্যাপ্রিওর বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। দেশে অনেকের অভিনয়ই ভালো লাগে। হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখে বড় হওয়া। বাংলা নাটক বলতে তার নাটক ছাড়া বুঝতাম না। সুবর্ণা আপু, হুমায়ুন ফরীদি, তারেক স্যার, আসাদুজ্জামান নূর—এনাদের অভিনয় ভালো লাগে। এখনকার সময়ে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, নিশো, অপূর্ব ভাইদের কথা বলব। আর অভিনেত্রীদের মধ্যে মেহজাবিন আপু। সম্প্রতি তাসনুভা তিশা আপুর একটা অভিনয় দেখে খুব ভালো লেগেছে। এ রকম আরো অনেকেই আছেন।

বড় পর্দায় কাজের বিষয়ে কোনো ভাবনা?

অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বড় পর্দায় কাজ করার। কিন্তু আমি তো পর্দায় কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে এখানে আসিনি। বরং আসার পর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। বড় পর্দায় নিজেকে দেখতেই হবে এমনটা নয়। তবে যদি কখনো অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মতো নির্মাতারা আমাকে কাজের সুযোগ দেন তাহলে হ্যাঁ বলে দেব।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *