হংকংয়ের ব্যবসাগুলোকে টানতে তেমন সফলতা নেই জাপানের

বছরখানেক ধরে চলা বিক্ষোভ ও চীনের বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন নিয়ে কোণঠাসা হংকংয়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টানতে অনেক টোপ ফেলছে টোকিও। কিন্তু জাপানের রাজধানী শহরটির এ টোপ তেমন কাজ করছে না বলেই মনে হচ্ছে। খবর এএফপি।

গত অক্টোবরে টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকু এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, আমি টোকিওকে এশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্যিক নগরী বানাতে চাই। যেসব প্রতিষ্ঠান হংকং ছাড়তে চায়, তাদের জন্য সেখানে একটি তথ্যকেন্দ্র চালুর সময় একথা বলেছিলেন তিনি।

হংকংয়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করতে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি রাখে টোকিও। এর মধ্যে রয়েছে জাপানে অস্থায়ী অফিস রাখার সুবিধা। এছাড়া কর রেয়াত, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এবং চীনের সিলিকন ভ্যালি শেনজেনের মতো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা। নানা দিক থেকেই জাপান বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারত। এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, সেখানে টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের মতো বড় একটি শেয়ারবাজার রয়েছে এবং সেখানে আগে থেকেই বিশ্বের অসংখ্য বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এর পরও সেখানে যেতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয়। তাছাড়া টোকিওর বাইরেও অনেক আকর্ষণীয় গন্তব্য টোপ ফেলে রেখেছে। এতে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে টোকিওর আশাবাদ হয়তো হালে পানি পাবে না।

প্রথমত, জাপানের আয়কর আকাশচুম্বী। প্রতিদ্বন্দ্বী সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের আয়কর যেখানে ২২ শতাংশ ও ১৭ শতাংশ, সেখানে জাপানে আয়কর দিতে হয় ৪৫ শতাংশ। ইংরেজি ব্যবহারের স্বল্পতা আরো একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। তার সঙ্গে রয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণে জাপানিদের অনীহা।

হার্ডওয়্যার ত্রুটির কারণে গত মাসে পুরোটা সময়ই বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল টোকিওর শেয়ারবাজার। ভবিষ্যতে এ ধরনের ত্রুটির শঙ্কায় নতুন ব্যবসায়ীরা সেখানে আস্থা পাবেন না।

অবশ্য জাপানে ইউরোপীয় ব্যবসায় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ম্রোকজেক নতুন প্রধানমন্ত্রী ইওশিহিদে সুগার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসবেন।

গত কয়েক বছরে এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত পদক্ষেপের প্রস্তাব এলেও সেগুলো বাস্তবে রূপ পায়নি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহামারীতে লকডাউনে জাপানের কঠোর অবস্থান। জাপানি নাগরিকরা ফিরতে পারলেও কয়েক মাস ধরে জাপানে বসবাসরত বিদেশীরা ফিরতে পারছেন না। কেউ কেউ এটাকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন।

তার ওপরে হংকং থেকে ব্যবসা সরে আসায় শুধু যে জাপান উপকৃত হবে, বিষয়টি এমন নয়; বরং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটির আরো অনেক দেশ এ সুযোগ গ্রহণে মুখিয়ে রয়েছে। হংকংয়ের ছাত্র ও উদ্যোক্তাদের জন্য ভিসা প্রদানে বেশকিছু সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তরিত হতে চায়, তাদের প্রতি খুবই ইতিবাচক থাকার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিটের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক মুখ্য অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস বলেন, মুখে মুখে যদিও স্থিতিশীল, শান্ত ও সমৃদ্ধ হংকং প্রত্যাশা করছে সিঙ্গাপুর, তবে সেখান থেকে ব্যবসা স্থানান্তরিত হলে যে নগররাষ্ট্রটি সবচেয়ে আগে বিবেচিত হবে, সেটা বলাই বাহুল্য। সিঙ্গাপুরে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশ ভালো আকারের উপস্থিতি রয়েছে। তারা হয়তো নতুন গন্তব্য না খুঁজে সেখানেই কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করতে পারে।

কিছু বিশ্লেষক অবশ্য বলছেন, বছরখানেক ধরে যদিও হংকংয়ে কিছুটা সংকটের মুখে পড়েছে, তবে এখনই সেখান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার পক্ষপাতী নয় বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিভিন্ন ইস্যুতে যদিও হংকংয়ের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ, তবে মূল ভূখণ্ড চীনে প্রবেশে বিনিয়োগকারী ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এ বাণিজ্য নগরী। ২০১৪ সাল থেকে সাংহাইয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হংকং শেয়ারবাজার। ফলে হংকংভিত্তিক কোম্পানিগুলো সহজেই তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারছে। তার সঙ্গে চীনের সিলিকন ভ্যালি-খ্যাত শেনজেনের কাছাকাছি হওয়ায় হংকংয়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরো সুবিধা পেয়ে থাকে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *