নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে সিডনিতে অনুষ্ঠেয় বর্ণবাদবিরোধী একটি প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশের হেফাজতে প্রায় নিয়মিতভাবে স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর মানুষের মৃত্যু বন্ধের দাবিতে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ শীর্ষক ওই প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আশা করা হয়েছিল, আজ সিডনিতে প্রতিবাদ মিছিলে জমায়েত হবে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। খবর এএফপি।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার মনে করছে, বিপুলসংখ্যক মানুষের এ জমায়েত হলে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে। ফলে সরকার ও স্থানীয় রক্ষণশীল প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সমর্থন নিয়ে এ প্রতিবাদ আয়োজন বন্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। আদালতের বিচারক ডেসমন্ড ফাগানও জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের জমায়েত হতে দেয়া ঠিক হবে না। ফাগান বলেন, এ ভাইরাসের মোকাবেলায় প্রত্যেকেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। এখন এ মুহূর্তে কোনোভাবেই আমাদের অসতর্ক হওয়া চলবে না। অস্ট্রেলিয়ায় ধারাবাহিকভাবে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ এখনো বর্তমান রয়েছে। একই সঙ্গে বড় ধরনের গণজমায়েতেরও অনুমতি নেই।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশটিতে চলমান বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে বেশকিছু প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে শনিবার সিডনিতে ওই প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজকরা আশা করেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে তারা দেশটির আদিবাসীদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নের বিষয়টি তুলে ধরতে পারবেন। গত তিন দশকে অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে চার শতাধিক আদিবাসীর।
এদিকে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার আগে অবশ্য পুলিশ এ প্রতিবাদ আয়োজনের বিষয়ে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের এমন সিদ্ধান্তে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল গণমাধ্যম ব্যাপক সমালোচনা শুরু করে। মূলত এর পরই পুলিশ আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। তবে আয়োজকরা বলছেন, আদালত যে রায়ই দিন না কেন তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবেন না। লাটোনা ডুঙ্গে নামে স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর একজন জানান, আমরা সিডনিতে প্রতিবাদে সমবেত হবই। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভালো না লাগলেও আমরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাব। এটা আমাদের ভূমি। কোনো কিছুই আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। উল্লেখ্য, লাটোনার ছেলে ডেভিড ২০১৫ সালে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে প্রতিবাদ বন্ধের জন্য পুলিশের এমন উদ্যোগের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য ডেভিড সুব্রিজ। তিনি বলেন, এমন পদক্ষেপের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এর বিপরীতে আমাদের প্রয়োজন সহযোগিতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া। এভাবে শক্তি প্রয়োগের কোনো মানে নেই।
সিডনির মতো একইভাবে মেলবোর্নের প্রতিবাদকারীদেরও সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, কোনো র্যালিতে অংশগ্রহণ করলে তাদের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ জনগণকে ঘরে অবস্থানের অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘরে অবস্থানের অনুরোধ না মেনেই অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় কয়েক হাজার মানুষ প্রতিবাদে জড়ো হয়। মরিসন বলেন, আসুন আমরা নিজেদের এভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে না ফেলে ক্ষোভ প্রকাশের অন্য কোনো পথ খুঁজে বের করি। তিনি স্বীকার করেন, অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে যে অন্যায় হচ্ছে, তার প্রতিকারে আরো অনেক কিছু করার আছে। তবে তার মতে, অস্ট্রেলিয়ার জাতিগত বৈষম্যের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়।