‘সাবস্ক্রিপশন ফি কনটেন্টের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে’

গত বছর ভিকটিম, ইতি মায়ের মতো প্রশংসিত সব নাটক উপহার দেয়ার পর নতুন বছর ওয়েব ফিল্ম ‘কষ্টনীড়’ নিয়ে হাজির হন নির্মাতা আশফাক নিপুন। গত ১৫ জানুয়ারি ভারতীয় ওটিটি প্লাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পায় ছবিটি। টিজার প্রকাশের পর থেকেই ওয়েব ফিল্মটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ছবিটি মুক্তির প্রায় এক মাস হতে চলেছে। ওয়েব ফিল্ম ‘কষ্টনীড়’, দর্শক প্রতিক্রিয়া এবং সঙ্গে ওটিটি প্লাটফর্মের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে সম্প্রতি আশফাক নিপুনের সঙ্গে টকিজের কথা হয়।

হইচইয়ে ‘কষ্টনীড়’ নির্মাতা নিপুনের প্রথম কাজ। যদিও আরো আগেই ওয়েব প্লাটফর্মে তার যাত্রা। হইচইয়ে কষ্টনীড় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে নিপুন বলেন, ‘হইচই কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পরিবারকেন্দ্রিক একটা গল্প চাওয়া হয়েছিল। আমার চেষ্টা ছিল পরিবারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র, সমাজের অসংগতিগুলো তুলে ধরা। সত্যি বলতে দর্শকদের খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। যেসব জায়গা থেকে সাড়া পাচ্ছি সেগুলো আমার জন্য অনুপ্রেরণামূলক।’ হইচই কর্তৃপক্ষও কষ্টনীড় পছন্দ করেছে এবং আগামীতে তার সঙ্গে আরো কাজের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানালেন নির্মাতা নিপুন।

‘কষ্টনীড়’ ওয়েব ফিল্মের বিষয়বস্তু কতটা প্রাসঙ্গিক তা বোঝাতে গিয়ে আশফাক নিপুন বলেন, ‘কিছু কাজ থাকে যেগুলোর রেশ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কষ্টনীড় এমন একটা কাজ যেটার দর্শক প্রতিক্রিয়া আমি সামনেও পাব। একজন নির্মাতা হিসেবে এটা আমার বিশ্বাস। ছয় মাস, এক বছর পর দেখলেও এর প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। কোথাও না কোথাও ছবিটির সঙ্গে মানুষ নিজেদের সংযোগ ঘটাতে পারবে। কষ্টনীড় প্রচারের এক মাস হতে চলেছে। এখনো আমি এটার জন্য সাড়া পাচ্ছি।’

আশফাক নিপুনের সঙ্গে আলাপের এক পর্যায়ে ওটিটি প্লাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেল—দুই মাধ্যমের অডিয়েন্স ফিডব্যাক পাওয়ার ভিন্নতার বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, ওটিটি প্লাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেল—দুই মাধ্যম থেকে দুই ধরনের সাড়া পাওয়া যায়। মাত্রার ভিন্নতা রয়েছে। ইউটিউবের তুলনায় ওটিটি প্লাটফর্মে দর্শক সাড়া কম আসে। বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইউটিউবে কোনো কনটেন্ট অনএয়ার হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আপলোড করা যায় এবং এখানে বিনা মূল্যে দর্শকরা দেখতে পারে। কিন্তু ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। কাজেই স্বাভাবিকভাবে ইউটিউবের তুলনায় ওটিটিতে তাত্ক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায় না। তবে ওটিটিতে কাজ দেয়ার কিছু সুবিধা রয়েছে। এ বিষয়ে আশফাক নিপুনের ভাষ্য, ইউটিউবে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের বালাই নেই। যে যেমন ইচ্ছা কনটেন্ট ছাড়তে পারে। তাত্ক্ষণিক জনপ্রিয়তার আশায় অনেক সময় স্থূল কনটেন্টের আধিক্য দেখা যায়। কিন্তু ওটিটি প্লাটফর্মে একটা কিউরেটিং টিম কাজ করে, যারা নিশ্চিত করে কনটেন্টের বিষয়, মান এবং রুচি যেন একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। এছাড়া ওটিটিতে কনটেন্টের প্রতিক্রিয়াটাও দীর্ঘমেয়াদি হয়। কনটেন্টটা আজীবন প্লাটফর্মে থাকে। কেউ আগে দেখে, কেউ পরে। ফলে অনেকদিন ধরে দর্শক প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে।

ওয়েব প্লাটফর্মে কোনো কনটেন্ট দেয়ার পর সেটার নির্মাণ ব্যয় যথাযথ উঠে আসে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় এ নির্মাতার কাছে। তার কথায় জানা গেল, ওয়েবে তাত্ক্ষণিক দর্শক সাড়ার মতো এর লাভ-ক্ষতির বিষয়টিও তাত্ক্ষণিক পাওয়া যায় না। ওটিটি ব্যবসার ধর্মই এটা। নিপুন বলেন, ওয়েব প্লাটফর্মে সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। ফলে একটা লাভ তো হয়ই। এখানে সুবিধা হলো সাবস্ক্রাইব করে দেখলে ওই সাবস্ক্রিপশন ফি কনটেন্টের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। আবার ওটিটিতে কোনো একটা কনটেন্ট যদি দুর্বল হয়ে পড়ে যায় তাহলে পরে আরো দুটি ভালো কনটেন্ট দিয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। লাভ না হলে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকা সত্ত্বেও ওটিটি খুলত না। এছাড়া বিদেশী নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি প্লাস, হুলুর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, দর্শক ওটিটি প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। ওয়েব প্লাটফর্ম হলো দীর্ঘমেয়াদি একটা প্রজেক্ট। তাত্ক্ষণিক লাভ এখানে হবে না। তবে যে লাভটা হবে সেটা হবে আসল লাভ। এখানে বুস্ট করার সুযোগ নেই। আলাপের শেষে আরেকটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানালেন আশফাক নিপুন। সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে তার।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *