সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বিএসইসি

আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান কমানো এবং জিরো কুপন বন্ডের কর সুবিধা প্রত্যাহারসংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব পরিবর্তন অনেকাংশে পুঁজিবাজারবান্ধব হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাবের এসব বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদও কমিশনের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

গতকাল বিকালে ডিএসইর পর্ষদ সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিবের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল বিএসইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সভায় বিএসইসির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, কমিশনার খোন্দকার কামালউজ্জামান, অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান ও মো. আব্দুল হালিম।

সভায় ডিএসইর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেটের বেশকিছু বিষয়ে তাদের মতামত কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে কমিশনকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসই। এ সময় কমিশনের পক্ষ থেকেও বাজেটের বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি ডিএসইর পর্ষদের সামনে তুলে ধরা হয়। বাজেটে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানায় কমিশন।

সভাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া নিয়ে আপত্তি না থাকলেও এক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেয়ার বিষয়টিতে বাজারসংশ্লিষ্টদের আপত্তি রয়েছে। ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্রের মতো ঝুঁকিমুক্ত খাতে শর্ত ছাড়াই অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে তিন বছরের জন্য কেউ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না। তাই বাজেট চূড়ান্ত করার সময় পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে বিনিয়োগের বিষয়টি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন।

প্রস্তাবিত বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার আগের মতোই ২৫ শতাংশ রয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদ্যমান ১০ শতাংশ কর ছাড় সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অনেক ভালো কোম্পানি পুুঁজিবাজারে আসতে চায় না। এখন কর ব্যবধান আরো কমে যাওয়ার ফলে পুঁজিবাজারে আসার আগ্রহ আরো কমবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে জিরো কুপন বন্ডের জন্য প্রযোজ্য কর সুবিধা সব ধরনের বন্ড এবং সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের (আর্থিক, অ-আর্থিক, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করার জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের বন্ডে কর ছাড় সুবিধা দেয়ার পরিবর্তে জিরো কুপন বন্ডের বিদ্যমান কর সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে বিএসইসি। এ বিষয়টি নিয়েও সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে।

কমিশনসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আগামীকাল বেলা ৩টায় এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএসইসি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *