গত এপ্রিলে জাপানের শিল্পপণ্যের ক্রয়াদেশ ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ১৯৯১ সাল থেকে উপাত্ত রাখার পর এটা সর্বনিম্ন মাসিক ক্রয়াদেশ। শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতিটির সংকট শিগগিরই যে শেষ হচ্ছে না, বিভিন্ন উপাত্তে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খবর রয়টার্স।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ ক্রয়াদেশ কমেছে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বৈদেশিক ক্রয়াদেশ কমেছে ২৮ দশমিক ১ শতাংশ। অবশ্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে বিশ্লেষকরা সামগ্রিক ক্রয়াদেশে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ধীরে ধীরে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেয়া বিধিনিষেধ শিথিল করায় শিল্প খাতের ভয়াবহ এ মন্দা শিগগিরই কেটে যাবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ আশাবাদ সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার সামনে দাঁড়িয়ে আছে জার্মানি। যদিও বন্ধ হওয়া অনেক দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কারখানায় লকডাউন নীতিমালা শিথিল হয়েছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুন্দেসব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে জার্মানির অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হবে এবং মহামারীপূর্ব সময়ের প্রবৃদ্ধিতে যেতে অন্তত দুই বছরের প্রয়োজন হতে পারে। বুন্দেসব্যাংক তার দ্বিবার্ষিক পূর্বাভাসে বলছে, পঞ্জিকাবর্ষ সমন্বিত উপাত্তে ২০২০ সালে অর্থনীতি ৭ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হবে। অসমন্বিত উপাত্ত অনুসারে, সংকোচনের হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
শুক্রবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আইফোর এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জার্মানির অর্ধেক কোম্পানি মে মাসে বিনিয়োগ স্থগিত রেখেছে এবং নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে মারাত্মক বিপর্যস্ত হওয়ায় ২৮ শতাংশ কোম্পানিই তাদের বিনিয়োগ প্রকল্প একেবারে বাতিল করে দিয়েছে।
আইফোর জরিপ পরিচালনাকারী দলের প্রধান ক্লাউস ভলর্যাব বলেন, এগুলো দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান।
চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সরকার নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব প্রশমনে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৩ হাজার কোটি ইউরো বা ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে গত বুধবার সর্বশেষ এ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে মেরকেল সরকার।
বুন্দেসব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হান্স ভাইদম্যান বলেন, স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ যথাযথ সিদ্ধান্ত এবং আমি সরকারের এ অর্থনৈতিক প্রণোদনা কর্মসূচিকে সমর্থন করি।
ফোকাস অনলাইন ম্যাগাজিনকে জার্মানির অর্থমন্ত্রী পিটার অল্টমায়া বলেন, জার্মানির উচিত পরবর্তী সংসদে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেটে ফিরে আসা।
গত বৃহস্পতিবার অল্টমায়া বলেন, ১৯৪৯ সালে ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে সর্বোচ্চ প্যাকেজ হতে যাচ্ছে নতুন এ অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজটি।
তিনি আরো বলেন, অর্থনীতি এখনো শেষ প্রান্তে চলে আসেনি। আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোয় আমাদের একসঙ্গে কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধেই প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন অল্টমায়া। তবে সংকট-পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যেতে ২০২২ সাল লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।