এপ্রিলে জাপানের গৃহস্থালি ব্যয়ে দুই দশকের সর্বোচ্চ পতন

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত এপ্রিলে জাপানের গৃহস্থালি ব্যয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পতন হয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ। গতকাল প্রকাশিত সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে গৃহস্থালি ব্যয়ে গত প্রায় দুই দশকে এমন পতন আর হয়নি। খবর এএফপি।

জাপানের ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রির উপাত্ত বলছে, বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহস্থালি ব্যয় পতনের প্রধান কারণ। এছাড়া গত বছরের বিক্রয়কর বৃদ্ধির বিষয়টিও পরিস্থিতির আরো অবনমন ঘটিয়েছে। ফলে ২০০১ সাল থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুযায়ী, গৃহস্থালি ব্যয়ের সবচেয়ে বাজে পতন হয়েছে গত এপ্রিলেই। এ নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে বিক্রয়কর বৃদ্ধির পর থেকে টানা সাত মাস জাপানে গৃহস্থালি ব্যয়ে পতন হলো। বিশেষ করে মাসটিতে পরিবহন ও টেলিকমিউনিকেশনের পাশাপাশি অবকাশযাপনের মতো কার্যক্রম ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে।   

প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা গতকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নভেল করোনাভাইরাস দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে প্রভাব ফেলছে ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যয়ের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে দেশের ব্যবসা খাতগুলো টিকে থাকার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, আমাদের সংক্রমণ প্রতিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে হবে।

এদিকে এমন সময় গৃহস্থালি ব্যয় পতনের এ উপাত্ত প্রকাশিত হলো, যখন এরই মধ্যে জাপানের অর্থনীতি মন্দায় প্রবেশ করেছে। গত মাসে প্রকাশিত দাপ্তরিক উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পর এই প্রথম মন্দায় পড়ল দেশটির অর্থনীতি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জাপানের অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। সার্বিকভাবে এ অর্থনৈতিক সংকটাবস্থার মূলে রয়েছে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং তা প্রতিরোধে নেয়া বিধিনিষেধমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ। এর আগে ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জাপানের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পতন হয়েছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ। মহামারীর কারণে অধিকাংশ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই কর বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় অর্থনীতির সুরক্ষায় নেয়া জরুরি কার্যক্রমের মেয়াদ গত মাসে বাড়িয়েছে ব্যাংক অব জাপান। একই সঙ্গে কর্তন করা হয়েছে দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও।

সার্বিক বিচারে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় জাপান অন্য অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। বিশেষ করে ইউরোপের ইতালি ও স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ব্রাজিলের চেয়ে জাপানের করোনা পরিস্থিতি ভালোই বলতে হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে ১৭ হাজার ৬৪ জন, মারা গেছে ৯০৭ জন। কিন্তু মূলত এপ্রিলের ৭ তারিখ থেকে জাপানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে টোকিও এবং আরো ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেন। পরে এ জরুরি অবস্থার আওতায় আনা হয় পুরো দেশ।

এ সময়ই দেশের প্রায় সব ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। মানুষজনকে নির্দেশ দেয়া হয় ঘরে থাকার। তবে তার পরও বিশ্বের অন্য অঞ্চলের চেয়ে জাপানের এ লকডাউন তুলনামূলকভাবে নমনীয় ছিল। এমনকি জারি করা নির্দেশ অমান্য করলে জাপান সরকার কোনো শাস্তিরও বিধান রাখেনি।

এরপর গত ২৫ মে জাপান জরুরি অবস্থা তুলে নেয়। এখন ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু হলেও কার্যক্রম পরিচালনায় যথেষ্ট সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দ্বিতীয় দফায় ভাইরাসের সংক্রণ এড়াতে হলে সবাইকে এখনো প্রয়োজনীয় সতর্ক ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *