রাষ্ট্রীয় মদদে সাইবার হামলার শিকার অস্ট্রেলিয়া: প্রধানমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর রাষ্ট্রীয় মদদে ‘সফিস্টিকেটেড’ সাইবার হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তার দাবি, হামলাকারীরা সরকারের সব পর্যায় এবং প্রয়োজনীয় সেবা ও ব্যবসা খাতে এ হামলা চালায়। তবে এ হামলার পেছনে কোন দেশের হাত রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি মরিসন। খবর বিবিসি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সাইবার হামলার পরিধি বেশ বিস্তৃত হলেও হামলাকারীরা ব্যক্তিগত তথ্যের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। গত কয়েক মাস ধরেই দেশটিতে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটছে। আর বর্তমানে হামলার পরিমাণ বাড়ছেই। এ অবস্থায় মরিসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার বিষয়ে অনুরোধ জানান। তার মতে, শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই নয়, বর্তমানে সারা বিশ্বেই সাইবার হামলার ঘটনা ঘটছে।

হামলার শিকার কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ না করলেও মরিসন জানান, সরকার, শিল্প, রাজনৈতিক সংগঠন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অতি জরুরি সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন খাত ও অন্য স্পর্শকাতর অবকাঠামোয় এ হামলা চালানো হয়। তিনি এর বেশি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে এর আগে দেশটির অস্ত্র প্রস্তুতকারক, সরকারি ঠিকাদার ও অ্যাকাউন্টিং ফার্ম সাইবার হামলার শিকার হয় বলে জানা যায়।

এদিকে হামলার ধরন ও পরিধি বিবেচনায় একে রাষ্ট্রীয় মদদে হামলা বলে নিশ্চিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ। মরিসন বলেন, এ ধরনের হামলা চালানোর মতো দেশের সংখ্যা খুব বেশি নেই। তিনি এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম না নিলেও সাইবার গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার হামলার সঙ্গে চীনের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। তাদের মতে, চীন হলো রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো গুটিকয়েক দেশের অন্যতম যাদের ধরনের হামলা পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে।

এর আগে চলতি বছরই বেশকিছু অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সাইবার হামলার শিকার হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্টিল উৎপাদনকারী ব্লুস্কোপ ও লজিস্টিকস ফার্ম টোল গ্রুপ। এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টারি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সাইবার হামলার শিকার হয় দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও। এর পেছনেও রাষ্ট্রীয় মদদ ছিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একইভাবে গত বছর জুনে হ্যাক হয় দি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাইট। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য ও গবেষণা চুরি করা হয়। এ সাইবার হামলায় অংশ নেয় উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন হ্যাকারদের ১৫ জনের একটি দল। এছাড়া ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ঠিকাদারের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গি বিমান ও নৌবাহিনীর নৌযানবিষয়ক তথ্য চুরি করা হয়। তারও আগে ২০১৫ সালে বিদেশী গুপ্তচরদের সাইবার হামলার শিকার হয় অস্ট্রেলিয়ান বুরো অব মেটিওরোলজি।

তবে বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ হামলার জন্য প্রায় সবাই চীনকেই সন্দেহ করছে। কারণ নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক বর্তমানে ভালো যাচ্ছে না। মূলত ভাইরাস নিয়ে স্বাধীন তদন্তের পক্ষে অবস্থান নেয়ার পরই ক্যানবেরায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত অস্ট্রেলিয়ার পণ্য বর্জনের হুমকি দেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া থেকে মাংস আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন। তাছাড়া দেশটি মে মাসে অস্ট্রেলিয়ান বার্লির ওপর ৮০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাছাড়া পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নেয়ার বিষয়ে নিজ দেশের শিক্ষার্থীদেরও সতর্ক করে দিয়েছে চীনা সরকার।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *