২০২০ সালে উন্নয়নশীল এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি থাকবে শূন্যের কোটায়: এডিবি

২০২০ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসতে পারে। বৃহস্পতিবার চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানায়, ২০২০ সালে নতুন করে শিল্পায়িত এ অর্থনীতিগুলো শূন্য দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, তার ঢেউ এসে লেগেছে এই উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয়ও। খবর কিয়োদো, রয়টার্স।

গত এপ্রিলে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। এখনো এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশে লকডাউন বহাল থাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, এডিবির সর্বশেষ পূর্বাভাসে তা ফুটে উঠেছে। এমনটা হলে ১৯৬১-পরবর্তী সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে এ অঞ্চল। গত এপ্রিলের পূর্বাভাসে অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল যে ২০২১ সালে অঞ্চলটি ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

গত এপ্রিলে এডিবির বার্ষিক পূর্বাভাসের সম্পূরক হিসেবে সম্প্রতি এ উপাত্ত প্রকাশ করেছে ম্যানিলাভিত্তিক ব্যাংকটি। তখন বিশ্বে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ১০ লাখ, সেখানে বর্তমানে তা ৭০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৭ শতাংশই উন্নয়নশীল এশিয়ায়।

এডিবির মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইয়াসুয়ুকি সাওয়াদা বলেন, লকডাউন নীতিমালা ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও চলতি বছরে কভিড-১৯-এর ধাক্কা অনুভব করবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতিগুলো। মূলত চলতি বছরের দুর্বল প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০২১ সালে অঞ্চলটিতে আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। 

সাওয়াদা বলেন, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে সরকারকে যথাযথ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এ প্রাদুর্ভাব ফের দেখা না দেয়।

তবে এডিবির প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, আগামী দিনগুলোয় কয়েক দফা প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে দেশগুলোর সার্বভৌম ঋণ ও আর্থিক সংকট উড়িয়ে দেয়া যায় না। এতে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ফের বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি।

উপ-অঞ্চল হিসেবে জাপান বাদে পূর্ব এশিয়া চলতি বছরে প্রবৃদ্ধির দেখা পেতে পারে। তবে ওই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসও গত এপ্রিলের ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

মূল ভূখণ্ড চীনে ২০২০ সালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ২০২১ সালে তা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছবে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২১ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া চলতি অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি ৪ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। তবে পরবর্তী অর্থবছরে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতি।

চলতি বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি ২ দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। ২০২১ সালে তা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা ভিয়েতনামের, যা চলতি বছরে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেতে পারে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে যথাক্রমে ১ শতাংশ, ৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি চলতি বছরে ৩ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে, যেখানে গত এপ্রিলে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের জন্য প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস গত এপ্রিলের ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *