যুক্তরাজ্যে আরঅ্যান্ডডি সেন্টার নির্মাণের অনুমোদন পাচ্ছে হুয়াওয়ে

চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে যুক্তরাজ্যে ৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার ব্যয়ে নিজস্ব গবেষণা এবং উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) সেন্টার নির্মাণে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। দেশটির সাস্টন অঞ্চলে গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষ সুবিধার কারণে ক্যামব্রিজ থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে নির্মিতব্য হুয়াওয়ের গবেষণাকেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় চিপসেটের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করা হবে। এরই মধ্যে সাউথ ক্যামব্রিজশায়ার ডিসট্রিক্ট কাউন্সিলকে হুয়াওয়ের আবেদন গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দেশটির টেলিকম অপারেটরদের হুয়াওয়ের সরঞ্জামের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করার জন্য আদেশ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ সক্ষমতা ব্যাহত হলে তাতে যেন অপারেটরদের সমস্যা সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাজ্য হুয়াওয়েকে ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপনে সীমিত ভূমিকা রাখতে পারবে বলে অনুমোদন দিয়েছিল। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ওয়াশিংটন এবং তার দলের কয়েকজন সদস্যের চাপের মুখে পড়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হুয়াওয়ের টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের অভিযোগে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। হুয়াওয়ে বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ফাইভজি সরঞ্জাম এবং ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন তৈরির প্রয়োজনীয় উন্নত মাইক্রোচিপ পাওয়া হুয়াওয়ের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে হুয়াওয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টর জাং বলেন, আমাদের গ্রাহকরা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার এবং ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করি, যা আমাদের ব্যবসার ক্ষতি করার জন্য নকশা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেনি।

হুয়াওয়েকে ছাড়া ফাইভজি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিষয়টি অনুধাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। যে কারণে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য এজেন্সিগুলো হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সংশোধনের বিষয়ে একটি প্রস্তাবে সই করেছে, যা এখন ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশ করা হয়েছে। হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংশোধনের প্রস্তাব সম্প্রতি ফেডারেল রেজিস্টারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের সেক্রেটারি উইলবার রস হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংশোধনের উদ্যোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক উদ্ভাবনের নেতৃত্বকে প্রতিহত করবে না। তবে আমরা সব ধরনের পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতি স্বার্থরক্ষার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা মার্কিন প্রযুক্তিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পক্ষে। যে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক চেষ্টায় উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং একটি মান নির্ধারণের পক্ষে কাজ করছি।

হুয়াওয়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি বর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইভজি নেটওয়ার্ক চুক্তি হুয়াওয়ের হাতছাড়া হওয়ার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসার ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *