ভারতে উৎপাদন বিভ্রাটে পড়ার আশঙ্কা

চীন-ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে। এর জেরে ভারতে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছে। গত কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বৃহৎ বাজার হিসেবে ভারত চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। চীনের সিংহভাগ স্মার্টফোন নির্মাতা ভারতে ডিভাইস উৎপাদনে নিজস্ব কারখানা পরিচালনা করছে। উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনার জেরে দেশটিতে শাওমি, অপো ও ভিভোর মতো স্মার্টফোন নির্মাতাদের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। খবর ইটি টেলিকম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ভারতে টানা কয়েক সপ্তাহ সব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে দেশটির সরকার অর্থনীতি সচল রাখতে সংক্রমণের মধ্যেই কিছু অঞ্চলে লকডাউন শিথিল করেছে। যে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করেছিল অপো। তবে গত শনিবার প্রতিষ্ঠানটির বৃহত্তর নয়ডা কারখানার বাইরে চীনা পণ্য বর্জনের তীব্র বিক্ষোভ পালিত হয়। এর জেরে কারখানাটিতে এখন উৎপাদন সক্ষমতার ৩০ শতাংশ সক্রিয় রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভারতে চীনা পণ্য বর্জনবিরোধী বিক্ষোভ দীর্ঘস্থায়ী হলে ডিভাইস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রাটে পড়ার আশঙ্কা করছে অপো সংশ্লিষ্টরা। ভারতে একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শাওমি, ভিভো ও অন্যান্য চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের। ভারতে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক কতটা সফল হবে বা এটা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। এটা সম্ভব হোক বা না হোক দেশটিতে ডিভাইস উৎপাদনকারী চীনা ব্র্যান্ডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতে শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ডের পাঁচটির মধ্যে চারটিই ছিল চীনের। দেশটির স্মার্টফোন বাজারের ৩০ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে শাওমি। অন্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ভিভো ১৭, স্যামসাং ১৬, রিয়েলমি ১৪ ও অপো ১২ শতাংশ বাজার দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ পাঁচে একমাত্র দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাংই জায়গা পেয়েছে। দেশটির বাকি ১১ শতাংশ স্মার্টফোন বাজারেও চীনা ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য। ট্রানশান লিমিটেড, ওয়ানপ্লাসসহ আরো কিছু নামি-বেনামি চীনা ব্র্যান্ডের রমরমা ব্যবসা রয়েছে ভারতে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, সীমান্ত উত্তেজনার জেরে ভারতে একটা জাতীয়তাবাদী আবেগ থেকে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছে। কিন্তু সেটা দেশটিতে খুব সহজে সম্ভব হয়ে উঠবে না। কারণ ব্র্যান্ড চীনের হলেও স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই উৎপাদন ও সংযোজন হয় ভারতে। এ উৎপাদন কার্যক্রমের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে। শুধু ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোই নয়; ভারতে উৎপাদন কারখানা রয়েছে চীনের চুক্তিভিত্তিক অর্ধডজন স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানির।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার ভারত। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশটিতে চীনা ব্র্যান্ডগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। দেশটিতে ফাইভজি ফোনের লাইভ স্ট্রিমিং করার কথা ছিল অপোর, যা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ ভারতের স্মার্টফোনের বাজার কোন অবস্থার দিকে যাচ্ছে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। আগামী জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এর প্রভাব দেখা যাবে।

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের গাফিলতি আছে। এমন একটি ধারণা তৈরি হওয়ার পর থেকেই নানা দেশের সঙ্গে ভারতেও জোরালো হচ্ছিল চীনা পণ্য বয়কটের ডাক। এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে লাদাখে ভারত ও চীন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংঘাত এবং হতাহতের ঘটনা।

সাম্প্রতিক ওই ঘটনার জেরে ভারতের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা চীনা পণ্য বিক্রি বন্ধ করবে। খুচরা পণ্যের ব্যবসা করেন এমন ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ভিপিন বনসাল বলেন, লাদাখ সীমান্তে ভারতীয় সৈনিকদের মৃত্যুতে সারা দেশেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরাও ভারতের নাগরিক। তাই এ পরিস্থিতিতে আমরা কেউই চীন থেকে পণ্য আমদানি করে সেদেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করতে রাজি নই। চীন থেকে বছরে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

পশ্চিমবঙ্গের খুচরা ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকেও চীনা পণ্য বিক্রি না করার ঘোষণা এসেছে। তবে তারা বলছে, হয়তো অতি প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য এখনই আমদানি বন্ধ করা যাবে না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *