মুম্বাইয়ের ঘনবসতিপূর্ণ তিন বস্তিতে সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের ঘনবসতিপূর্ণ তিনটি বস্তির অর্ধেকের বেশি বাসিন্দাই কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক একটি জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসি।

বস্তি তিনটি হলো চেম্বুর, মুতাঙ্গা ও দহিসার। সেখানকার প্রায় সাত হাজার বাসিন্দার ওপর চলতি মাসের শুরুতে যৌথভাবে একটি জরিপ পরিচালনা করে মুম্বাই মিউনিসিপ্যালিটি, সরকারি সংস্থা নীতি আয়োগ ও টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ। দৈবচয়নের ভিত্তিতে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, বস্তি তিনটির ৫৭ শতাংশ বাসিন্দাই নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন। চেম্বুর, মুতাঙ্গা ও দহিসারের অবস্থান মুম্বাইয়ের মধ্য, পশ্চিম ও পূর্বাংশে। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এ তিন বস্তিতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস।

ভারতের সবচেয়ে করোনা আক্রান্ত শহরগুলোর মধ্যে একটি মুম্বাই। মঙ্গলবার পর্যন্ত শহরটিতে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ১৮৭ জন। জরিপ পরিচালনাকারী গবেষকরা বলছেন, মুম্বাইয়ে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তাদের গবেষণায় ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রথমদিকে যতটা ধারণা করা হয়েছিল, মুম্বাইয়ের বস্তিগুলোয় করোনা সংক্রমিত হয়েছে তার থেকে অনেক দ্রুতগতিতে। মুম্বাইয়ের সোয়া কোটি অধিবাসীর অর্ধেকের বেশি এসব বস্তির বাসিন্দা।

এ গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল জনসংখ্যার ঘনত্ব নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা, তা খতিয়ে দেখা। টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের গবেষক ড. উল্লাস এস কোলথুর বলেছেন, ‘আমরা যে তিনটি এলাকা বেছে নিয়েছি, সেগুলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আদর্শ ছিল। সেখানে করোনা সংক্রমণের সংখ্যায় ভিন্নতা ছিল। বাসাবাড়ির ধরনেও বৈচিত্র্য ছিল। ওই এলাকাগুলোয় যেমন বস্তি রয়েছে, তেমন রয়েছে একক বাড়ি ও হাউজিং কমপ্লেক্স। সুতরাং করোনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টির ওপর জনসংখ্যার ঘনত্বের প্রভাব পর্যবেক্ষণের আদর্শ জায়গা ছিল সেগুলো।’

গবেষকরা বলেছেন, ‘কেবল এ তিনটি এলাকার তথ্য দিয়ে পুরো শহরের পরিস্থিতি বিচার করাটা সঠিক হবে না। তবে আমাদের বিশ্বাস, অন্যান্য এলাকায় সংক্রমণের হারে এখানকার থেকে খুব বেশি পার্থক্য দেখা যাবে না।’

এর আগে কয়েকটি বড় শহরে জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর করোনার প্রভাব সম্পর্কে জানতে জরিপ চালানো হয়েছিল। গত মে মাসে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, লন্ডনে প্রতি ছয়জনে একজন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জুনে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতি পাঁচজনে একজন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। আর চলতি মাসে সরকারি একটি জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রতি চারজনের একজনের শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়েছে।

টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের গবেষক ড. সন্দ্বীপ জুনেজা বলেছেন, ‘ঘনবসতি সংক্রমণের ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, জরিপ প্রতিবেদনগুলো থেকে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।’ গবেষকরা বলছেন, মুম্বাইয়ের তিনটি বস্তিতে সংক্রমণ বেশি হওয়ার একটি কারণ হতে পারে একই টয়লেট কয়েকটি পরিবারের ব্যবহার করা।

জরিপ প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, আক্রান্তদের বড় একটি অংশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি অথবা খুব সামান্যই দেখা গেছে। তারা কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে আপনা-আপনিই ভালো হয়ে গেছেন। এ কারণে এলাকাগুলোয় মৃত্যুহার অনেক কম দেখা গেছে। সেখানে প্রতি এক থেকে দুই হাজার রোগীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *