অস্ট্রেলিয়ায় গত বছরের বিপর্যয়কর দাবানলে প্রায় ৩০০ কোটি প্রাণী নিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানান একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক। খবর বিবিসি ও এএফপি।
অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী কর্তৃক পরিচালিত ওই গবেষণায় বলা হয়, দীর্ঘস্থায়ী ও দাবানলে ১৪ কোটি ৩০ লাখ স্তন্যপায়ী, ২৪৬ কোটি সরীসৃপ, ১৮ কোটি পাখি এবং ৫ কোটি ১০ লাখ ব্যাঙ নিহত বা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
দাবানলে ঠিক কী পরিমাণ প্রাণী মারা গেছে, তার সংখ্যা না জানালেও গবেষকরা বলছেন যারা দাবানল থেকে বাঁচতে পেরেছে তাদের অবস্থাও তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। প্রতিবেদনটির লেখকদের একজন ক্রিস ডিকম্যান বলেন, খাবার, বসবাসের জায়গা এবং আগ্রাসী প্রাণীদের হাত থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবে তাদের অবস্থা খুবই করুণ।
তিনি আরো বলেন, দাবানলের সামনে ৩০০ কোটি প্রাণী কাতরাচ্ছে—এ চিত্রটা যখন কল্পনা করবেন, তা সত্যিই অনেক বড়। এটা এত বড় সংখ্যা, যা অনুধাবন করাও কঠিন।
২০১৯ সালের শেষ এবং ২০২০ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার খরাপীড়িত বন ও জঙ্গলে দাবানলে পুড়ে যায় ১ লাখ ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল। এতে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং হাজারো বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়ার আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্তৃত ও প্রলম্বিত দাবানল। এর মারাত্মক আকার ধারণ করার পেছনের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জানুয়ারির দিকে এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছিল, ওই দাবানলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়া রাজ্যে শতকোটি প্রাণী মারা গেছে। তবে মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে পুরো মহাদেশটি হিসেবে আনা হয়েছে এবং বিস্তৃত এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব সিডনির শীর্ষ বিজ্ঞানী লিলি ভন ইডেন।
গবেষণার ফলাফল এখনো খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আগামী মাসের দিকে এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। তবে গবেষক দল বলছে, ৩০০ কোটি প্রাণী যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ উপাত্ত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
ডব্লিউডব্লিউএফ যে এ গবেষণার অর্থ জুগিয়েছে, তার অস্ট্রেলিয়া শাখার সিইও ডারমন্ট ও’গরম্যান বলেন, বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় এমন একটা দাবানল ফের হানা দিক এমনটা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। আধুনিক ইতিহাসে এটি বন্যপ্রাণীর ওপর সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।
দাবানলের সময় অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় কোয়ালাদের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মকাল প্রলম্বিত হয়েছে এবং এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শীতের মৌসুম ছোট হয়ে আসায় দাবানল সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে ঠেকেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কাজ করেছেন সেগুলো হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব সিডনি, ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটি এবং কনজারভেশন গ্রুপ বার্ডলাইফ অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া সরকার জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ৫ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দের অঙ্গীকার করেছে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন শক্তিশালী করতে হবে।
দাবানলের কারণ অনুসন্ধানে একটি রয়্যাল কমিশন গঠন করেছে অস্ট্রেলিয়া। আগামী অক্টোবরে প্রতিবেদন পেশ করবে ওই কমিশন।