অন্যান্য খাতের মতো নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব কয়লা খাতেও পড়েছে। চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় ধস নামতে পারে বলে একের পর এক পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার কোল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনও (এপিবিআই) একই কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে তাপ কয়লার চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ তাপ কয়লা রফতানিকরক দেশ ইন্দোনেশিয়া। খবর মন্টেল ও মাইনিংডটকম।
এপিবিআইয়ের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে তাপ কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াতে পারে সব মিলিয়ে ৮৯ কোটি ৫০ লাখ টনে। মহামারীর শুরু আগে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৯৮ কোটি টনে। অর্থাৎ মহামারী শুরুর আগের পূর্বাভাসের তুলনায় পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস ৮ কোটি ৫০ লাখ টন কমিয়েছে এপিবিআই, যা ২০১৯ সালে পণ্যটির মোট বৈশ্বিক চাহিদার তুলনায় ১০ শতাংশ কম।
এপিবিআইয়ের প্রধান পান্দু এসজাহিরির বলেন, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনৈতিক গতি শ্লথ করে এনেছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক ও শিল্প খাতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে। একই অবস্থা বিদ্যমান কয়লা খাতেও। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব যে কয়টি খাতে সরাসরি পড়েছে, তার মধ্যে কয়লা অন্যতম। লকডাউনের জেরে অনেক দেশে পণ্যটির উত্তোলন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা জ্বালানিটির চাহিদা কমিয়ে দিচ্ছে। এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় পণ্যটির দামে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে শুরু করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার তাপ কয়লা রফতানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত ও ফিলিপাইন। এসব দেশের প্রত্যেকটিতেই মহামারী হানা দিয়েছে। ফলে সব দেশেই পণ্যটির চাহিদা কমতির দিকে রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও ভারত কয়লায় স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করছে। ফলে অভ্যন্তরীণ উত্তোলন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পণ্যটির আমদানি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে উভয় দেশই।
এপিবিআইয়ের প্রাক্কলন অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কয়লার চাহিদা সবচেয়ে বেশি কমে আসতে পারে ভারতে। চলতি বছর ভারতে তাপ কয়লার চাহিদা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় চার কোটি টন কমিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয় দেশে পণ্যটির চাহিদা পূর্বাভাস কমানো হয়েছে ১ কোটি টন করে। ফিলিপাইনে এবার পণ্যটির চাহিদা পূর্বাভাস আগের তুলনায় ৫০ লাখ টন কমিয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ টনে নামিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে যা-ই ঘটুক না কেন, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতির ওপর নির্ভর করছে পুরো বিষয়টা। পরিস্থিতির উন্নতি হলে পণ্যটির চাহিদা ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রমণ করলে দেশে দেশে চলমান লকডাউন আরো বাড়ানো হতে পারে। এতে পণ্যটির বর্তমান চাহিদা পূর্বাভাস আরো কমে যেতে পারে।
পান্দু এসজাহিরির বলেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতি বছর রফতানি হওয়া মোট তাপ কয়লার ৬৫ শতাংশ রফতানি হয় চীন, ভারত ও ফিলিপাইনে। এ দেশগুলোতে চাহিদা কমে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানে পড়তে পারে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা শিল্প। এদিকে কয়লার দামে মন্দা ভাব ইন্দোনেশিয়ার চ্যালেঞ্জকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে সরবরাহকৃত মোট কয়লার ৫০ শতাংশই অলাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। যার মূল কারণ জ্বালানিটির অস্বাভাবিক হারে দরপতন।
ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কয়লা উত্তোলন খাত বর্তমানে অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশটিতে যে পরিমাণ কয়লা উত্তোলন হয়, তার অর্ধেকের বেশি অলাভজনক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জুনের জন্য প্রতি টন কয়লার রেফারেন্স মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫২ ডলার ৯৮ সেন্ট, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম।
তবে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কম্বোডিয়া ও রাশিয়া উত্তোলন উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনলেও কয়লার বৈশ্বিক বাজারে ভারসাম্য ফিরবে না বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। কারণ কয়েক বছর ধরেই পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা ক্রমেই কমছে। নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কায় এ সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে আগে থেকে দরপতনে থাকা পণ্যটির দাম আরো কমছে।