ড্যানি, লেনোর ও বেলার মধ্যে পার্থক্য করা সাধারণ যে কোনো মানুষের জন্যই কঠিন। সবার গায়েই বাদামি লোম; তারা একই রকমভাবে ঠাণ্ডা পানিতে খেলাধুলা করে, মাছ ধরে। তারা সবাই গ্রিজলি ভালুক। সাধারণ কেউ এদের মধ্যে ফারাক টের না পেলেও মেলানি ক্লাপহ্যামের কথা ভিন্ন, তিনি একজন ভালুক বায়োলজিস্ট। গ্রিজলিদের নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়েছেন এক দশকের বেশি সময়। তিনি ভালুকদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের মধ্যে যে সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো থাকে, সেগুলো শনাক্ত করতে পারেন। ‘আমি প্রত্যেক ভালুকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে খেয়াল করি—কানে কাটা দাগ কিংবা নাকে কোনো ক্ষত’, মেলানি বলেন। খবর সিএনএন।
কিন্তু সবাই নিশ্চয় মেলানির মতো বিশেষজ্ঞ নন। আর বছরের বিভিন্ন ঋতুতে ভালুকের শারীরিক গঠনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়, তখন তো কোনো নির্দিষ্ট ভালুককে চেনা আরো কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু ভালুক গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ভালুককে শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
কয়েক বছর আগে এ সমস্যার সমাধান করতে ক্লাপহ্যাম ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহারের চিন্তা করেন। এ সফটওয়্যার মুখের বিভিন্ন ছবির মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য চিহ্নিত করে।
যেই ভাবা সেই কাজ—সিলিকন ভ্যালির দুই টেক কর্মীর সঙ্গে মিলে ক্লাপহ্যাম তৈরি করেন বিয়ারআইডি। এ ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার দিয়ে গ্রিজলি ভালুকদের নজরদারি করা হয়। এখন পর্যন্ত এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ১৩২টি ভালুক শনাক্ত করা হয়েছে।
মানুষের ক্ষেত্রে ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক আছে। এটাকে প্রাইভেসির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বন ও খামারে পশুদের জন্য এ সফটওয়্যার খুবই দরকারি ও গবেষণা সহায়ক বলে মনে করেন। প্রযুক্তিটি সস্তা, দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রাণীদের জন্য আক্রমণাত্মক নয়। এর মাধ্যমে প্রাণীদের কলার পরানো বা ট্যাগিং করা সহজ হয়ে যায়।
ক্লাপহ্যাম ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়াতে পোস্টডক্টরাল ফেলো। কয়েক বছর আগে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ক্যালিফোর্নিয়ার দুই টেক কর্মীর সঙ্গে। তারা আলাস্কার কাটমাই ন্যাশনাল পার্কে গ্রিজলি ভালুকদের জীবন-যাপন পর্যবেক্ষণে প্রযুক্তির সহযোগিতা নিতে আগ্রহী ছিলেন। এ তিনজনে মিলে পার্কের ভালুকদের হাজারখানেক ছবি সংগ্রহ করেন। এরপর তারা সেগুলো ডগ হিপসটেরাইজার নামের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। ডগ হিপসটেরাইজার মূলত কুকুরদের শনাক্ত করার সফটওয়্যার। তারা দেখেন সফটওয়্যার ভালুকের চেহারা শনাক্ত করতে পারে। তখন তারা ভালুকের চেহারা শনাক্ত করতে তৈরি করেন বিয়ারআইডি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তাদের এ প্রযুক্তি ৮৪ শতাংশ নিখুঁত।
বিয়ারআইডির মতো খামারের পশুদের শনাক্ত করতে তৈরি হয়েছে ক্যাটেল ট্রেস অ্যাপ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসের ক্যাটেল র্যাঞ্চার হগল্যান্ড তার খামারের গরু শনাক্ত করতে ক্যাটেল ট্রেস অ্যাপ ব্যবহার শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি তার খামারের যে কোনো গরুকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারছেন। এটা খামারে রোগের বিস্তার রোধে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে গুরুত্ব বেড়েছে এ ক্যাটেল ট্রেস অ্যাপের।
তবে এ প্রযুক্তি যেমন বন্য প্রাণীদের সংরক্ষণে ব্যবহূত হচ্ছে তেমনি আবার পোচার বা বন্যপ্রাণী শিকারি-পাচারকারীদেরও সুবিধা করে দিয়েছে। ওয়াইল্ডবুকের পরিচালক তানায়া বার্জার-উল্ফ বলেছেন, এ প্রযুক্তি যেমন বিজ্ঞানী বা সংরক্ষণবাদীদের জন্য দারুণ কাজের জিনিস, তেমনি পোচারদের জন্যও। পোচাররা শিকারের জন্য প্রাণীদের সহজে খুঁজে বের করতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
অন্যদিকে বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করাটা সহজ নয়। কারণ গাছপালা ও তাদের চলাচলের কারণে প্রাণীদের ভালো ছবি পাওয়া কঠিন হয়। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক অনিল জৈন এবং তার সহকর্মীরা চেষ্টা করছেন লেমুর, বানর ও শিম্পাঞ্জিদের শনাক্ত করতে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে।