ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইন বিক্রিতে রেকর্ড

কভিড-১৯ মহামারীর যুগে সশরীরে দোকানে গিয়ে কেনাকাটায় রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ফলে ক্রেতারা এখন বাস্তবের দোকানের পরিবর্তে ভার্চুয়াল শপে কেনাকাটাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এ কারণে এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইন বিক্রির পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। খবর এপি।

অনলাইন শপিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডোবি অ্যানালিটিকস জানিয়েছে, এ বছর ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে মার্কিনরা রিটেইল ওয়েবসাইটগুলো থেকে পণ্য ক্রয়ের পেছনে মোট ৯০০ কোটি ডলার খরচ করেছে। এর আগের রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালে ৭৪০ কোটি ডলার। গত বছরের চেয়ে এবার অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে ২২ শতাংশ।

একদিকে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে, অন্যদিকে দোকানগুলোকে ক্রেতার অভাবে হা-হুতাশ করতে হয়েছে। করোনা মহামারী-সংক্রান্ত সতর্কতার কারণে রিটেইলারগুলো এবার ভিড় এড়ানোর জন্য বিক্রির সময় কমিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে শুক্রবার সেসব দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনাও ছিল অনেক কম। রিটেইল ট্র্যাকার সেন্সরম্যাটিক সলিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল শপগুলোয় ক্রেতাদের উপস্থিতি কমেছে ৫২ শতাংশ।

সেন্সরম্যাটিকের গ্লোবাল রিটেইল কনসাল্টিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ব্রায়ান ফিল্ড জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের রিটেইলাররা বেশি ক্রেতা সংকটে ভুগেছে। আর পণ্যের মধ্যে বিক্রি সবচেয়ে বেশি কমেছে অলংকার ও পাদুকার। এছাড়া পোশাক বিক্রি ৫০ শতাংশ ও গৃহস্থালি পণ্যের বিক্রি ৩৯ শতাংশ কমেছে বলে রিটেইলনেক্সট জানিয়েছে।

চলতি বছর মার্কিন রিটেইল খাত কতটা দুরবস্থায় রয়েছে, তা একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ব্ল্যাক ফ্রাইডের দিনে দোকানগুলোয় সশরীরে ক্রেতাদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও এ উপস্থিতি চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। ব্রায়ান ফিল্ড অবশ্য আসন্ন বড়দিন উৎসব সামনে রেখে দোকানগুলোয় ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তার ধারণা, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে দোকানগুলোয় ভিড় কম থাকবে—এমন প্রত্যাশায় অনেক ক্রেতাই এ মুহূর্তে দোকানমুখী হচ্ছেন না। তারা সেই সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ফিল্ড আরেকটি বিষয়ে পরিবর্তনের ধারণা করছেন। তিনি মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী-উত্তর সময়ে যে ট্রেন্ড চালু হতে পারে, সেটি হলো থ্যাংকসগিভিং ডে-তে দোকান বন্ধ রাখা। বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ২০১৩ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকসগিভিং ডে-তেও দোকান খোলা রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। কিন্তু ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগের দিনে রিটেইলারদের বিক্রি সাধারণত ততটা জমজমাট হয় না। আর এবার তো মহামারীর কারণে বৃহস্পতিবার থ্যাংকসগিভিং ডে-তে বেশির ভাগ দোকান বন্ধই রাখা হয়েছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন ফিল্ড। এবার দিনটিতে দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা কমেছে ৯৫ শতাংশ।

অ্যাডোবি অ্যানালিটিকস বলছে, ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনলাইন বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে ওয়ালমার্ট কিংবা টার্গেটের মতো বৃহদাকার রিটেইলাররা। তবে ছোট রিটেইলাররাও এই জোয়ার থেকে একেবারে বাদ পড়েনি। থ্যাংকসগিভিং ডে ও ব্ল্যাক ফ্রাইডে উপলক্ষে বড় রিটেইলারদের বিক্রি বেড়েছে ৪০৩ শতাংশ, যেখানে এই দুদিনে ছোট রিটেইলারগুলোর বিক্রি ৩৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *