ভুল করে ক্ষুদ্র ব্যবসার বিজ্ঞাপন বন্ধ করছে ফেসবুক এআই

নিউইয়র্কের নারী উদ্যোক্তা রুথ হরিগান। স্থানীয় স্যুভেনিরের দোকানগুলোতে মধু ও মোমজাতীয় পণ্য বিক্রি করেন। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দোকানগুলো বন্ধ করায় তিনি অনলাইনে পণ্য বিক্রি শুরু করেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি ফেসবুক বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ১১ নভেম্বর নীতি লঙ্ঘনের কারণে তার হানিগ্রামজ নামের বিজ্ঞাপন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি ভেবে পাননি যে তার মধু ভর্তি উপহারগুলো কী ধরনের নীতি লঙ্ঘন করেছিল।

তিনি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। ব্ল্যাক ফ্রাইডে ঘিরে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমার বছরের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এ কারণে এ সময় যদি বিক্রি বন্ধ থাকে, তবে তা আমাকে পঙ্গু করে দেবে।

করোনাভাইরাস অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী খুচরা চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ায় হরিগানের মতো কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিজ্ঞাপনদাতা ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টও এ উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন বিক্রির সুযোগ দিয়েছিল। তবে কনটেন্ট মডারেশন সফটওয়্যারের ভুল, গ্রাহকদের সহযোগিতার জন্য সীমিত বিকল্প ও সমস্যাগুলো কীভাবে ঠিক করতে হবে, তা নিয়ে ফেসবুক স্বচ্ছতার অভাবের মুখোমুখি হয়েছে।

এ বছর ফেসবুকের মানব মডারেটররা নির্বাচন ও করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ভুল তথ্যের প্রচার ঠেকাতে ব্যস্ত ছিল। সুতরাং সংস্থাটি অন্য ক্ষেত্রগুলোতে পর্যবেক্ষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা (এআই) অ্যালগরিদমগুলোতে অনেক বেশি ঝুঁকে পড়ে। আর এতেই বিপত্তি বাধে। ফেসবুকের স্বয়ংক্রিয় ফিল্টারগুলোতে অনেকগুলো ছোট ব্যবসা ধরা পড়ে এবং তাদের পরিষেবার বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এটি হওয়ার কারণও তাদের জানার সুযোগ থাকে না।

কানাডার অটোয়ায় স্থায়ী মেকআপ ক্লিনিক চালানো আইভন চানচেজের বিজ্ঞাপনগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কারণ হিসেবে ফেসবুক থেকে জানানো হয়েছিল ‘নীতি লঙ্ঘন’। মহামারীর কারণে তাকে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছিল এবং আর্থিকভাবে টিকে থাকার জন্য ফেসবুকই একমাত্র ভরসা ছিল। কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া ছাড়াই পরদিন অ্যাকাউন্টটি আবার খুলে দেয়া হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটার মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এমন হওয়ায় তাকে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি বলেন, এ অভিজ্ঞতা এমন বিনিয়োগ নিয়ে আমাকে নার্ভাস করে তুলেছে।

এছাড়া এমন ঘটনার পর কোনো বিজ্ঞাপন অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার হলেও সেটি গতি হারাচ্ছে। কারণ ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের অ্যালগরিদম কোন ব্যবহারকারী কোন বিজ্ঞাপনে আগ্রহী হতে পারে, তা নির্ধারণ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়।

ডিজিটাল বিপণন সংস্থা ইন সোস্যালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জেসিকা গ্রসম্যান বলেন, ফেসবুক প্রায়ই বুঝতে পারে না, তাদের নিজস্ব অ্যালগরিদমের প্রভাব এবং এটির অর্থ কী। ইন সোস্যাল ক্লায়েন্টদের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ বা স্থগিত করার কোনো যুক্তি নেই। একটি পিজ্জা ভেন্ডিং মেশিন সংস্থা, একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল সংস্থা, একটি কফি বিতরণ পরিষেবা ও একটি চুলের ডিজাইন পরিষেবা সংস্থার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছিল।

এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক একটি বিবৃতিতে বলেছে, আমরা জানি কোনো ধরনের ব্যবসায়িক বিপর্যয় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া হতাশার, বিশেষত বছরের এ সংকটময় সময়ে। আমরা সব ব্যবসার জন্য নিখরচায় সহায়তা দিই। আমরা নিয়মিত আমাদের টুলস ও সিস্টেমগুলোকে উন্নত করতে এবং আমাদের দেয়া সমর্থন ব্যবহার ও অ্যাক্সেস আরো সহজ করার জন্য কাজ করি। সাম্প্রতিক বিঘ্নের কারণে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

মহামারীর সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যখন ফেসবুককে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার শুরু করে, তখন তাদের কাছে এটি একটি অবিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন নির্বাচন ও কভিড-১৯ ঘিরে মিথ্যা তথ্য ঠেকাতে কাজ করা ফেসবুকের এআই ভুল করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিচ্ছে। শিকাগো ভিত্তিক প্রযোজনা সংস্থা জিএফপি ডেলিভার্ড করোনাভাইরাসের সময় মুদি দোকান এড়াতে একটি উপায়ের বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই বিজ্ঞাপনগুলো দুই মাস বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে হরিগান ফেসবুকে কাজ করা কর্মীদের নামগুলো খুঁজতে শুরু করেন। তিনি টুইটারে সংস্থাটির অ্যাড প্রডাক্টসের পরিচালক রব লেথার্নকে খুঁজে পান এবং সমস্যার কথা জানান। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তার অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের একটি ই-মেইল পান। হরিগান বলেন, তারা এটিকে ভুলক্রমে বন্ধ করে দিয়েছিল বলে জানিয়েছে। এর বাইরে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ব্লুমবার্গ অবলম্বনে

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *