ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা কার্যকরে ব্রেক্সিট গণভোট এবং যুক্তরাজ্যে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে রুশ সরকারের প্রভাব রয়েছে, এমনটাই মনে করছেন ৪৯ শতাংশ ভোটার। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর গার্ডিয়ান।
অবজারভারের ওই জরিপে দেখা গেছে, ৪৯ শতাংশ ভোটার মনে করে ব্রেক্সিট গণভোটে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ রয়েছে। অন্যদিকে ২৩ শতাংশ মনে করে এতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ হয়নি। ৪৭ শতাংশ ব্রিটিশ মনে করে গত ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে ক্রেমলিন।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির বহুল প্রত্যাশিত প্রতিবেদনের পর জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হলো। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভোটে সম্ভাব্য রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তে সরকারের অনাগ্রহ ছিল। রাশিয়ার হুমকিকে মারাত্মকভাবে অবহেলা করেছে যুক্তরাজ্য।
সর্বশেষ তিনটি সাধারণ নির্বাচন, ইইউ গণভোট এবং স্কটল্যান্ডের গণভোটে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল কিনা এ বিষয়ে জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়। প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাবেই দেখা গেছে, রুশ হস্তক্ষেপ হয়েছে এটা মনে করে এমন ব্রিটিশ নাগরিকের সংখ্যা হস্তক্ষেপ হয়নি তাদের চেয়ে বেশি। এর আগে জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে অভিযোগ তুলেছিল বিভিন্ন মহল। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ী হওয়া এবং হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ের পেছনে মস্কোর হাত রয়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই। এ নিয়ে এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক রবার্ট ম্যুলারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও পেশ করা হয়।
২০১৪ সালে আয়োজিত স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে অনুষ্ঠিত গণভোটে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ হয়েছে এমনটা মনে করে জরিপে অংশগ্রহণকারী দুই-পঞ্চমাংশ বা ৪০ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক। ইইউর গণভোটে ক্রেমলিনের হস্তক্ষেপ হয়েছে এমনটা মনে করে ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ৭০ শতাংশ লিবারেল ডেমোক্র্যাট ভোটার এবং ৬২ শতাংশ লেবার ভোটার বিশ্বাস করে সেখানে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ রয়েছে। তার বিপরীতে মাত্র ৩৯ শতাংশ রক্ষনশীল ভোটার মনে করে ক্রেমলিনের হস্তক্ষেপ রয়েছে। রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যেও যেখানে ৩৯ শতাংশ ভোটার রাশিয়ার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে মনে করছে, সেখানে তাতে ভিন্নমত রয়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ ভোটারের।
এদিকে সর্বশেষ এ জরিপে আরো দেখা গেছে, লেবার পার্টির বিপরীতে টরিদের প্রতি সমর্থন ৮ পয়েন্ট থেকে প্রায় অর্ধেক কমে ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। রক্ষণশীলদের প্রতি সমর্থন ২ পয়েন্ট কমে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে লেবার পার্টির প্রতি সমর্থন ২ পয়েন্ট বেড়ে ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও গ্রিন পার্টির প্রতি জনসমর্থন গত সপ্তাহে ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত ছিল।
মহামারী মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপে জনআস্থা অনেক নিচে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের ৪৩ শতাংশ অনাস্থার বিপরীতে চলতি সপ্তাহে অনাস্থা ৪৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা গত সপ্তাহের ৩৮ শতাংশ থেকে চলতি সপ্তাহে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর আস্থাও কমেছে। তার নীতি সমর্থন করছে ৩৬ শতাংশ ভোটার এবং অনাস্থা প্রকাশ করছে ৪৫ শতাংশ ভোটার। তার নেট রেটিং গত সপ্তাহের মাইনাস ফোর থেকে চলতি সপ্তাহে মাইনাস এইটে নেমে এসেছে।
গত ২৩ ও ২৪ জুলাই ২ হাজার ২ জন ব্রিটিশ নাগরিকের ওপর জরিপের ভিত্তিতে ওই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।