বৈশ্বিক আকরিক লোহা উত্তোলন ১.২% কমতে পারে

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতিটি খাতেই নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ পড়েছে। বাদ যায়নি আকরিক লোহা খাত। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে খনিজ পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শীর্ষ স্থানীয় তথ্য বিশ্লেষণকারী কোম্পানি গ্লোবাল ডেটা সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। খবর মাইনিংডটকম ও মেটাল বুলেটিন।

গ্লোবাল ডেটার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে ২২৩ কোটি ৮ লাখ টন আকরিব লোহা উত্তোলন হতে পারে, আগের বছরের তুলনায় যা ১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। মূলত অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলসহ ব্যবহারিক ধাতুটির শীর্ষ উত্তোলকারী দেশগুলোয় নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। সংক্রমণ যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে এসব দেশে লকডাউনসহ নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বেশির ভাগ দেশের খনিজ কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বা সীমিত করে আনা হয়েছে। এতে দেশে দেশে পণ্যটির উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়া খনিজ পণ্যটির উত্তোলন হ্রাসে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

অস্ট্রেলিয়া বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম আকরিক লোহা উত্তোলনকারী দেশ। চলতি বছর দেশটিতে ব্যবহারিক ধাতুটির উত্তোলন সামান্য বাড়ার প্রত্যাশা করছে গ্লোবাল ডেটা। তবে উত্তোলনে প্রবৃদ্ধি থাকতে পারে যৎসামান্য। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় আকরিক লোহা উত্তোলন মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় ড্যামিয়েল দেশটিতে পণ্যটির উত্তোলন হ্রাসের অন্যতম কারণ। ঘূর্ণিঝড়টি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আকরিক লোহা উত্তোলনকারী কোম্পানি রিও টিন্টোর রেল, সড়ক ও খনিজ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এর জের ধরে ২০২০ সালে কোম্পানিটির আকরিক লোহা উত্তোলন ৬০ লাখ টনের মতো কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে অন্যান্য শীর্ষ উত্তোলনকারী কোম্পানি বিএইচপি ও ফোরটস্কিউ মেটাল গ্রুপের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফলে দেশটি এ বছর পণ্যটির উত্তোলন কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে খুব একটা প্রবৃদ্ধি নাও মিলতে পারে।

তবে ২০২০ সালে ব্রাজিলের আকরিক লোহা উত্তোলন বেশ কমে যেতে পারে। বছরের প্রথম দিকে দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ভারি বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে। এতে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্রাজিল তথা বিশ্বের শীর্ষ আকরিক লোহা উত্তোলনকারী কোম্পানি ভ্যালের উত্তোলন কার্যক্রম ব্যাপক হারে ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দেশটিজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আকস্মিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশটিজুড়ে লকডাউন জারি করা হয়। এতে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে আকরিক লোহা উত্তোলন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। গ্লোবাল ডেটার প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশটির আকরিক লোহা উত্তোলন গত বছরের তুলনায় তিন কোটি টন কমে যেতে পারে।

গ্লোবাল ডেটার জ্যেষ্ঠ খনিজ বিশ্লেষক ভিন্নেখ বাজাজ বলেন, এ বছর প্রত্যাশার তুলনায় ব্রাজিলের আকরিক লোহা উত্তোলন কমলেও ভ্যালের উত্তোলনে গত বছরের তুলনায় রেকর্ড প্রবৃদ্ধি বজায় থাকতে পারে। গত বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বে মিনাস জেরাইস অঙ্গরাজ্যের ব্রুরুমাদিনহো এলাকায় ভ্যালের একটি বাঁধ ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় কোম্পানিটির ২৫০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই সময় খনিজ উত্তোলনসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কোম্পানিটি, যা বিদায়ী বছরে ভ্যালের আকরিক লোহা উত্তোলন আগের বছরের তুলনায় ২১ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল।

এদিকে ভারতেও একই অবস্থা বিদ্যমান। ২০১৯ সালের মার্চে ভারতে ওড়িশায় খনিজ নিলাম বিলম্ব হওয়ার প্রভাব এ বছরেও বজায় থাকতে পারে। এছাড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তো রয়েছেই। গ্লোবাল ডেটার প্রাক্কল অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে এবার দেশটিতে আকরিক লোহার উত্তোলন দাঁড়াতে পারে ২০ কোটি ৫৭ লাখ টনে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *