কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে উদ্যোগী হচ্ছে বিশ্ব। নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বের প্রথম কার্বনশূন্য আর্থিক কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে যুক্তরাজ্য। লক্ষ্য পূরণে বিস্তৃত পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে দেশটি। গতকাল দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাকের ঘোষণা দেয়া এ পরিকল্পনার আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিঃসরণ শূন্যে নামানোর রোডম্যাপ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেখানে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সংস্থাগুলো কীভাবে মানিয়ে নিতে চায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের কার্বনশূন্য হওয়ার পথে সংস্থাগুলো কীভাবে শামিল হবে, তা বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে।
ব্রিটিশ সরকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ পদক্ষেপ ১৩০ লাখ কোটি ডলারের বেশি সম্পদকে কার্বনশূন্য প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসবে। এটি বিশ্বের মোট আর্থিক সম্পদের ৪০ শতাংশের সমান। পরিকল্পনার আওতায় বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হচ্ছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রতিশ্রুতিগুলো একটি বিশাল নগদ তহবিল তৈরিতে সহায়তা করবে। এটি কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন করবে। এর মধ্যে রয়েছে কয়লা থেকে দূরে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভরতা বাড়ানো, আরো গাছ লাগানো এবং জীবাশ্মের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক গাড়িতে স্থানান্তর হওয়া।
এদিকে ১২০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। আয়োজকরা কপ২৬ নামের এ সম্মেলনকে বিপর্যয়কর বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে মানবতার পথ নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্যও এ সম্মেলনকে অন্যতম ধাপ বলা হচ্ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্প বিপ্লবের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে ১৯৬টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এ সম্মেলনেই কার্বনশূন্য আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য তুলে ধরতে চলেছে যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে সব অর্থনৈতিক ও আর্থিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়া নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাজ্য। এজন্য দেশটি শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি৭ এবং জি২০ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে। এছাড়া দেশটি ছয়টি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে একত্র করেছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিতে চায় যে, কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে তাদের তহবিল প্রয়োজন।
পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থায়ন পেতে যে বাধাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, সেগুলোও দূর করার লক্ষ্য নিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে ১০ কোটি পাউন্ডের তহবিল। জলবায়ু পরিকল্পনার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থায়ন দ্রুত ও সহজ করতে টাস্কফোর্স অন অ্যাকসেস টু ক্লাইমেট ফাইন্যান্সের সহসভাপতি হিসেবে কার্যক্রম জোরদার করবে দেশটি।
এছাড়া উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর জন্য তহবিল গঠন করছে যুক্তরাজ্য। এ তহবিল দেশগুলোর সবুজায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করবে। জলবায়ুবান্ধব এসব প্রকল্পে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড ব্যয় করবে দেশটি। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের মোবিলিস্ট প্রোগ্রাম সম্প্রসারণের জন্য ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের তহবিল অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন বিনিয়োগযোগ্য খাতের বিকাশে সহায়তা করা। বহুপক্ষীয় জলবায়ু বিনিয়োগ তহবিলের সবচেয়ে বড় দাতা বলেও দাবি করেছে যুক্তরাজ্য। এরই মধ্যে দেশটি ১৫০ কোটি পাউন্ড সহায়তা দিয়েছে।