করোনাকালে প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে

কভিড-১৯ অতিমারী বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের জন্য এক বড় বিপর্যয়। এ বিপর্যয় মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর প্রস্তুতি কম ছিল। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এ দুর্ভোগের তীব্রতা বেশি ছিল। এছাড়াও তাদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়। নারী প্রতিবন্ধীদের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত গতকালের এক ওয়েবিনার থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

‘হেলথকেয়ার ফর পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি ইন দ্য টাইম অব করোনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. আনোয়ারা বেগম। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো মহামারীকালে প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য ও অসমতার সম্পর্কে তুলে ধরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলোর মাত্রা ও তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।

কভিডের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্মুখসারিতে থাকা হাসপাতাল ও সেগুলোতে কর্মরত নার্সদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের নিবিড় সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে বলে জানান ড. আনোয়ারা বেগম। সেবিকাদের সেবাদক্ষতা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নার্সদের প্রস্তুতি এবং রোগীদের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য এ সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। আর এজন্য মোট ৬৫টি অংশীজন ও প্রধান তথ্যদাতা সাক্ষাত্কার পরিচালনা করে। প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর উন্মোচন প্রতিবন্ধী নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য অনুকূল নীতি প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে বলে জানান ড. আনোয়ারা বেগম।

গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষের চেয়ে প্রতিবন্ধী মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। প্রতিবন্ধী নারী, পুরুষ ও শিশুদের সামাজিক নিন্দা, অপবাদ, ঘৃণা, লজ্জা, নিগ্রহের শিকার হতে হয়। এছাড়া সামাজিক কুসংস্কারের শিকার হতে হয়। অন্যদিকে তেমনি আর্থিক ও সামাজিকভাবে অন্যদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। এছাড়া তাদের জন্য সেবাদানকারী, সাহায্যকারী, পরিচর্যাকারী ও দোভাষীর প্রয়োজন হয়। বিধায় তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হয় না। যেসব রোগী হুইলচেয়ার ব্যবহার করে বা চলাচলের জন্য অন্য কারো সাহায্য নেয় তাদের সেবা ও পরিচর্যার জন্য সম্পদ ও জনবলের পাশাপাশি কাঠামোগত বিন্যাসের (বিশেষ করে অপ্রতুল নার্সিং ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে) প্রয়োজন হয়। কিন্তু যথাযথ যানবাহন পরিষেবার অভাব, বড় শহরগুলোতে বিশেষায়িত ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার আধিক্য পরিস্থিতি জটিল করেছে। অসহায় ও উচ্চঝুঁকিতে থাকা রোগীদের বিশেষ প্রয়োজন বিষয়ে সেবিকা বা নার্সদের মধ্যে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি একত্রে তাদের সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *