নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে দেশে দেশে আর্থিক সংকট তীব্র হচ্ছে। মরণঘাতী ভাইরাস মোকাবেলায় অর্থ ঢালতে গিয়ে অনেক দেশের সরকারি কোষাগার তলানিতে ঠেকেছে। এ অবস্থায় বর্তমান সময় ও ভাইরাসপরবর্তী আয় বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠবেন সরকারপ্রধানরা। যার অংশ হিসেবে আয়ের নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি বিরাজমান খাতে বাড়তে পারে কর আরোপ। এরই মধ্যে এমন পথে হেঁটেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। বিদেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি করারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। অন্যদিকে ফিলিপাইনের একজন আইনপ্রণেতাও বিদেশী ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করারোপের জন্য সংসদে বিল উত্থাপন করেছেন। এবার এ তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ড। বিদেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা করছে থাই সরকার। এরই মধ্যে এ বিষয়ে খসড়া একটি বিলও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
এর আগে গত মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া বিদেশী প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের জন্য আইন পাস করে। দেশটির বাজারে বিদ্যমান অনাবাসিক ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করেছে জাকার্তা। স্ট্রিমিং সার্ভিস, অ্যাপ্লিকেশন ও ডিজিটাল গেমের মতো সেবা এ করের আওতাভুক্ত থাকবে। ডিজিটাল পণ্য ও সেবা বিক্রিতে সরকারকে এ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। একইভাবে ফিলিপাইনের একজন আইনপ্রণেতাও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য এ খাতে মনোযোগ দেয়ার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেছে। যদিও এ বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে থাই সরকার প্রযুক্তি খাতের আয় বাড়াতে এ উদ্যোগ নিল।
তবে থাইল্যান্ডে এ বিষয়ে বিলের প্রাথমিক অনুমোদন পেলেও এটি কার্যকর করতে এখনো দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটের প্রয়োজন হবে। খসড়া এ বিল অনুযায়ী, থাইল্যান্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করা যেসব অনাবাসিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা প্লাটফর্মের বার্ষিক আয় ১৮ লাখ বাথ (স্থানীয় মুদ্রা) বা ৫৭ হাজার ৪৩৪ ডলারের বেশি, ডিজিটাল সেবা প্রদানের ওপর তাদের ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।
থাইল্যান্ডের এ উদ্যোগের ফলে করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্য খাতে অর্থ ঢালতে গিয়ে তলানিতে ঠেকা সরকারি কোষাগারে বছরে ৩০০ কোটি বাথ যোগ হবে বলে মনে করছে ব্যাংকক। মিউজিক, ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং এবং হোটেল বুকিংয়ের মতো ডিজিটাল সেবার ওপর এ ভ্যাট কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সরকারের মুখপাত্র র্যাচহাডা থানাডিরেক। আর থাইল্যান্ডে ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই এ ভ্যাটের আওতায় আসতে হবে বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ডে গত কয়েক বছরে ইন্টারনেট সেবায় দ্রুত প্রবৃদ্ধি এসেছে। যে কারণে সরকার আগে থেকেই ইন্টারনেট অর্থনীতি কাজে লাগিয়ে কোষাগার ভারী করার চিন্তা করছিল। এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর আঘাতে বৈশ্বিক অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে পড়ায় এখন সরকার এ খাতের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাকে দ্রুত বাস্তবে রূপ দিতে চায়। আর দেশটিতে প্রযুক্তি সেবা পরিচালন করা প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
থাই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি থানাওয়াট মালাবুপ্পাহা মনে করেন, এটি কার্যকর হলে থাইল্যান্ডের প্রযুক্তি ব্যবসায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত বা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। কারণ থাই নাগরিককে ব্যবহার করে যে-ই অর্থ উপার্জন করবে, তাকেই সরকারকে কর দিতে হবে।
খাতসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারীর ফলে ঘরবন্দি থাকা মানুষেরা এখন খুব বেশি ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে উঠেছে। এতে করে অন্যান্য খাতে যখন আয় নিম্নমুখী, তখন এসব প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয়ে বেশ উল্লম্ফন হয়েছে।