নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এ বছর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ভোক্তা বাজার ভারতে ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়। ফলে প্রতি বছরের মতো উৎসবকে কেন্দ্র করে এবার অফলাইন বা বাজারে গিয়ে কেনাকাটায় বেশ ভাটা পড়ে। এর পরিবর্তে এ সময় ভোক্তারা অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটায় বেশি ঝুঁকেছে। যে কারণে দেশটির বাজারে এ মৌসুমে অনলাইনের মাধ্যমে রেকর্ড পণ্য বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির অনলাইন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করা মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন ফ্লিপকার্টের বিক্রিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলা এ উৎসব মৌসুমে ভারতের বাজারে অনলাইনের মাধ্যমে মোট পণ্য বিক্রির ৮৮ শতাংশই জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান দুটোর মাধ্যমে হয়েছে। বাজারবিষয়ক তথ্যপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রেডসিয়ার কনসালটিংয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইটি টেলিকম ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ভারতের অন্যতম শীর্ষ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গেল উৎসব মৌসুমে দেশটির বাজারে অনলাইনের মাধ্যমে নিট পণ্য বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩০ কোটি ডলারে, যা প্রাক্কলনের তুলনায় অনেক বেশি। আর ব্র্যান্ড ও খুচরা পণ্য মিলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে কেবল অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্ট বিক্রি করেছে ৭৩০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট বিক্রির ৮৮ শতাংশ। মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ধর্মীয় এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিক্রিতে প্রতিষ্ঠান দুটো যে প্রাক্কলন ধরেছিল, এটি তার চেয়ে এক-পঞ্চমাংশ বেশি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পোশাক পণ্যের পোর্টাল মিন্তারাসহ ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন ফ্লিপকার্ট গ্রুপ এ মৌসুমে ৫৮ শতাংশ বিক্রি নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে এর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান জেফ বেজোসের মালিকানাধীন অ্যামাজনের বাজার হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। এছাড়া বাকি পণ্য বিক্রি হয়েছে দেশটির বাজারে থাকা অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে।
অনলাইন বেচাকেনার বিষয়ে রেডসিয়ারের পরিচালক মৃগাঙ্ক গুটগুটিয়া বলেন, টায়ার থ্রি (মধ্যম সারির ক্রেতা, যারা একবার পণ্য ক্রয়ের পর পরবর্তী সময়েও আসে) ভোক্তাদের কারণে এ বছর অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনায় বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফ্লিপকার্ট শুরু থেকেই এমন ধরনের ভোক্তাদের দিকে নজর দিয়ে আসছে। অন্যদিকে অ্যামাজনের সবসময় নগরকেন্দ্রিক ভোক্তাদের টার্গেট করে বাজার প্রসারিত করে থাকে।
তবে রেডসিয়ার কনসালটিংয়ের এ প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অ্যামাজন। প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রতিনিধি বলেন, স্বচ্ছ পদ্ধতিতে করা গবেষণা ব্যতীত এমন অনুমানভিত্তিক প্রতিবেদনের বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না। অন্যদিকে ফ্লিপকার্ট এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেই রাজি হয়নি।
রেডসিয়ার কনসালটিংয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর ভারতের অফলাইন বা প্রথাগত বাজারে গিয়ে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা চলে আসে। এর ফলে এ বছর উৎসবকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ভারতের ছোট শহরগুলোও অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ বছর প্রচুর পরিমাণ নতুন ভোক্তা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের উৎসবের কেনাকাটা শেষ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশটিতে অনলাইনের মাধ্যমে বেচাকেনার সার্বিক প্রবৃদ্ধির ওপর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রসার ঠেকাতে লকডাউনের কারণে এ বছর ভারতে সরাসরি বাজারে গিয়ে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বড় ধস নেমেছে। এর বিপরীতে প্রথমবারের মতো মফস্বল এলাকা থেকেও এবার অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করেছে ভোক্তারা। সব মিলিয়ে চার কোটি নতুন ভোক্তা এবার অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করেছে।
দেশটির অনলাইন মার্কেটপ্লেস স্নাপডিল বলছে, উৎসব সময়ে অর্ডার করা প্রতি ১০টির মধ্যে চারটি অর্ডারই নতুন ভোক্তাদের কাছ থেকে এসেছে। যার মধ্যে আবার ৯০ শতাংশের বেশি অর্ডার এসেছে নগরের বাইরের ছোট শহর থেকে।