শেষবারের মতো প্রিয় সন্তান কফিনে চড়ে চলে যাচ্ছেন বুয়েন্স আয়ার্সের পথ ধরে। সেই ঈশ্বরতুল্য সন্তান দিয়েগো ম্যারাদোনাকে বিদায় জানাতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল আর্জেন্টিনার রাজধানী শহরটি। কেউ একা একা ম্যারাদোনার ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন, কেউ আবার প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে স্মরণ করছেন প্রিয় দিয়েগোকে। এসবের ভিড়েই ম্যারাদোনার কফিনবাহী গাড়িটি এগিয়ে যেতে থাকে রাজধানী থেকে কিছুটা দূরের সমাধিস্থল ভেল্লা ভিস্তার দিকে। বিদায় নিতে নিতেও যেন উত্তেজনা জমিয়ে দিলেন ফুটবল ঈশ্বর। ফলে ভক্তদের ভিড় সামলাতে মারমুখী হতে হয়েছিল পুলিশকেও। কিন্তু এসব উত্তেজনা থেকে এদিন অনেক দূরে ম্যারাদোনা। চির ঘুমে তলিয়ে যাওয়া অসংখ্য মানুষের ভালোবাসার এ মানুষটি যে তখন জাগতিক আবেগ-অনুভূতির ঊর্ধ্বে। খবর এএফপি।
এক সময় বুয়েন্স এইরেসজুড়ে সন্ধ্যা নামতে নামতে বাবা-মায়ের পাশে এ কিংবদন্তিও আড়াল হয়ে গেলেন চিরতরে। শেষ মুহূর্তে পরিবার ও কাছের বন্ধুরাই কেবল সেখানে উপস্থিত ছিল। এর আগে গত বুধবার ৬০ বছর বয়সে ঘুমের ভেতর হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। মাঠের নান্দনিকতা ও মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় যিনি দীর্ঘ সময় মাতিয়ে রেখেছিলেন গোটা দুনিয়াকে।
শেষবারের মতো বিদায় জানাতে এসে অসংখ্য মানুষ এদিন কেঁদেছে প্রিয় মানুষটির জন্য। যাদের কেউ কেউ ভেবেছিল ম্যারাদোনা ‘অমর’। তেমনই একজন হলেন সমাধিস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাস ড্রাইভার অ্যান্তোনিও আভিলা। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম দিয়েগো বুঝি অমর, ভেবেছিলাম আমাদের ভালোবাসা উপেক্ষা করে সে মরতে পারবে না। আমি খুবই বিষণ্ন অনুভব করছি সেই মানুষটির জন্য, যিনি আমাদের অনেক আনন্দ দিয়েছিলেন।
তবে সমাধিস্থলের শান্ত অবস্থার বিপরীত চিত্র ছিল বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায়। উন্মত্ত জনতাকে সামলাতে মোতায়েন করতে হয়েছিল দাঙ্গা পুলিশ। এক পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হয়েছে জলকামান, রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস। একই সময়ে ভিন্ন এ দুটি চিত্র যে ম্যারাদোনার জীবনের উত্থান-পতনকেই যেন ফুটিয়ে তুলেছে।
এর আগে মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই বুয়েন্স আয়ার্সজুড়ে ঢল নামে ভক্ত-সমর্থকদের। প্রিয় মানুষটির কফিনটি শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেয়ার জন্যও ছিল আপ্রাণ চেষ্টা। সেই চেষ্টায় এক সময় বাঁধ ভাঙলে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। এ সময় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে আসা বেশির ভাগ মানুষের পরনে ছিল আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি। যে জার্সি পরে ক্যারিয়ারজুড়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপসহ অনেক সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য কেবল বুয়েন্স আয়ার্সেই নয়, এদিন ভিড় জমে উঠেছিল আর্জেন্টিনা থেকে অনেক দূরে ইতালির নেপলস শহরেও। এক সময় এ শহরটির মুকুটহীন সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছিল ক্লাবটি। প্রিয় ‘দিয়েগো’কে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে তাই এতটুকু কার্পণ্য করেনি তারাও।