বাইটডান্সের বাজারমূল্য কত?

চীনভিত্তিক বাইটডান্স শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানি। টিকটকের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি নতুন করে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাইটডান্স, যা সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ১৮ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দুই সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নতুন তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে আগাম আলোচনা শুরু করেছে বাইটডান্স। তহবিল সংগ্রহে সিকোইয়া ক্যাপিটাল এবং জেনারেল আটলান্টিকের মতো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আরো অন্তত ২০০ কোটি ডলার পেতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকেও তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে বাইটডান্সের।

বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত টিকটক নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দেশে চাপে রয়েছে। তথ্যনিরাপত্তা দুর্বলতার অভিযোগে টিকটক নিষিদ্ধ করতে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম মার্কিন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে আলোচনা শুরু করেছিল মাইক্রোসফট। তবে শেষ পর্যন্ত টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি করতে ওরাকল করপোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাইটডান্স।

গত ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরে ৪৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবসা পরিচালনার পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালিকানা হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে দেশটিতে আর কোনো আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না টিকটক কর্তৃপক্ষ বলে নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়। ওই সময় টিকটক নিষিদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

টিকটকের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা ধ্বংস করতে অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এমনকি তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিক্রি করতে বাধ্য করার মতো পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তথ্য নিরাপত্তার অজুহাতে দেশটিতে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে তারা আইনের আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিল।

টিকটক বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা ও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল চীন। বেইজিংয়ের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও তৈরির অ্যাপ টিকটকের স্থানীয় কার্যক্রম নানা অজুহাত ও অপকৌশলে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, যা কোনো পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না। বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দিতে সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অপকৌশলের জবাব দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ ও পন্থা চীনের হাতে রয়েছে। চীন প্রশাসন তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করলে তা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব একটা ইতিবাচক হবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এর আগে টিকটকের প্রধান কার্যালয় চীন থেকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বাইটডান্স। চীনের বাইরে প্রধান কার্যালয় নির্মাণে টিকটকের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় লন্ডন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যে কারণে লন্ডনের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে টিকটক কর্তৃপক্ষকে। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে এর আগে ওয়াল্ট ডিজনির সাবেক কো-নির্বাহী কেভিন মেয়ারকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল টিকটক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। টিকটকের নতুন সিইও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা চীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এড়াতে চীনের বাইরে কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে টিকটক ছাড়েন কেভিন মেয়ার।

শুধু টিকটক নয়; গত আগস্টে আরেক চীনা ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্ট নিয়ন্ত্রিত টেক্সট ও ভয়েস মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটকেও যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করতে দ্বিতীয় আরেকটি নির্বাহী আদেশে সই করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি টিকটক ও উইচ্যাট। যে কারণে সেবা দুটির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

ওই সময় এক সাক্ষাত্কারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন চীনভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি বা তাদের সেবার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে, যারা চীন সরকারের কাছে তথ্য পাচার করছে বলে আমরা মনে করছি। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে ফেশিয়াল রিকগনিশন প্যাটার্ন, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও কনট্যাক্ট।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *