ফের তালেবান শাসনের শঙ্কা আফগানদের

ঠিক ১৯ বছর আগে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে এমন এক যুদ্ধের সূচনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা আজও চলমান। মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল তালেবান শাসনের অবসান ঘটানো। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতা হিসেবে দাবি করা আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে তালেবানদের অস্বীকৃতি জানানোর ফল এ যুদ্ধ। এ যুদ্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করতে পেরেছে, কিন্তু পুরোপুরি শক্তিহীন করে দিতে পেরেছে কি?

খোদ আফগানরাই বলছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী তালেবানদের নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এখন তারা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আফগানরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় ফের ক্ষমতায় চলে আসতে পারে চরমপন্থী দলটি।

১১ সেপ্টেম্বরের ওই সন্ত্রাসী হামলা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্য ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘটনার জন্য জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদাকে দায়ী করেছিল। এই আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে তাদের হাতে তুলে দিতে তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তালেবানরা জানায়, লাদেনকে তখনই তারা হস্তান্তর করবে, যখন যুক্তরাষ্ট্র তার সংশ্লিষ্টতার সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবে।

আল-কায়েদার আশ্রয়দাতা ও লাদেনকে হস্তান্তরে অপারগতা জানানো তালেবান সরকারে উত্খাতের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলার মাধ্যমে তারা তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পেরেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। যার ফলে আবার দৃশ্যপটে আবির্ভাব হয়েছে দলটির। নতুন করে ক্ষমতায় যাওয়ার ছক আঁকছে তারা।

গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সৈন্য প্রত্যাহারবিষয়ক একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করে তালেবানরা। এছাড়া বর্তমানে আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আর তাদের এসব কার্যক্রমকে পুনরায় ক্ষমতায় আসার অপতত্পরতা হিসেবে দেখছেন খোদ

আফগানিস্তানের নাগরিকরাই।

আফগানদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কার জায়গা যেটি, সেটি হলো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দীর্ঘ ১৯ বছরেও তালেবানদের চরিত্র খুব বেশি বদলায়নি। তাই তাদের শাসনামলে ব্যভিচারের দায়ে নারীহত্যা, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংসতা অথবা নারীশিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির মতো নৈরাজ্য প্রত্যক্ষ করেছেন যেসব আফগান, তাদের জন্য তালেবানের পুনরায় ক্ষমতায় আসাটা নরকবাসের শামিল।

তাদেরই একজন কাবুলের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী কাতায়ুন আহমাদি। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে তালেবান শাসন ছিল রীতিমতো এক দুঃস্বপ্ন। আমরা নিজেদের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’

এখন পর্যন্ত আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে যে শান্তি আলোচনা হয়েছে, তাতে নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তালেবানদের কথা বলতে দেখা গেছে খুব কমই। কাতায়ুন আহমাদির স্বামী ফরজাদ ফরনুদ আফগানিস্তান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির পর থেকেই তালেবান সহিংসতা বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমেই প্রতীয়মান হয় যে তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত ১৮ বছরে আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তালেবানদের শাসনামলে সেগুলো ছিল না।’

দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো মতৈক্য তৈরি হয়নি। এ দুই পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক চুক্তিতে পৌঁছতে আরো কয়েক বছর সময় লেগে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে কয়েকজন মার্কিন আইনপ্রণেতা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, যে চুক্তি নারী ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে পারবে না, সেই চুক্তির বিরোধিতা করবেন তারা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, এটি আফগানিস্তানের নিজস্ব বিষয়, তাই এটি নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের এ নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে তালেবানরা ফের ক্ষমতায় আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আফগানরা। তাদের মতে, সরকারের সঙ্গে তালেবানদের কোনো চুক্তি হলে সেটি শান্তি চুক্তি হবে না, তা হবে তালেবানদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার চুক্তি। এএফপি

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *