প্রণোদনা প্যাকেজের পক্ষে অবস্থান বাইডেনের

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ আশ্বাস দেন তিনি। খবর এএফপি।

কভিড-১৯ মহামারীর ফলে গণহারে কর্মী ছাঁটাই ও অর্থনৈতিক শ্লথগতি কাটিয়ে উঠতে আইনপ্রণেতাদের বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতারা। কিন্তু নতুন প্যাকেজ পাসের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছেন না রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা।

চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে জয়ী হন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবিত ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ সমর্থন করেন এবং কংগ্রেসকে তা পাস করার আহ্বান রেখেছেন।

নিজ শহর ডেলাওয়ারের উইলমিংটন থেকে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, প্রস্তাবিত প্যাকেজের মাধ্যমে সব কাজ বাস্তবায়ন করা যাবে। ভবিষ্যতে নয়, এখনই তা কার্যকর করতে হবে। তিন দশক ধরে ডেলাওয়ারের এ আসন থেকেই মার্কিন সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাইডেন।

রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে অবশ্য বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ অনুমোদন পাচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজন মেটাতে কিছুটা ছোট আকারের প্যাকেজের প্রস্তাব তাদের। কিন্তু তাতে সম্মতি দিচ্ছেন না ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা।

গত মার্চে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কেয়ারস অ্যাক্ট অনুমোদন করেছিল মার্কিন কংগ্রেস। ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহায়তার জন্য ঋণ ও অনুদানসহ যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের সহায়তা ছিল ওই প্যাকেজে।

রিটেইল খাতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এ প্যাকেজ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু গ্রীষ্মে ওই প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে নতুন সহায়তা প্যাকেজের জন্য বসে আছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ আমেরিকানরা।

বাইডেন বলেন, আমেরিকানদের টিকিয়ে রাখতে এ প্যাকেজ। এই মহামারী কাটিয়ে উঠতে তাদের সহায়তা করতে হবে, তাদের ব্যবসাগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে, তা ঠিকমতো ছাড়তে হবে।

আগামী জানুয়ারিতে জর্জিয়ায় অনুষ্ঠেয় দুটি সিনেট আসনে নির্বাচন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাজির হয়েছে। যদি ডেমোক্র্যাটরা সেখানে জিততে পারেন তাহলে প্রতিনিধি পরিষদের মতো সিনেটেও তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তবে কংগ্রেসে নতুন অধিবেশন বসার আগেই রিপাবলিকানদের তাদের বিরোধিতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন।

তিনি বলেন, অন্তত ডজনখানেক আইনপ্রণেতাকে এ প্যাকেজের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে হবে, যাতে অনেক মানুষের জীবন ও কর্মসংস্থান সুরক্ষা পায়। আমাদের এখনই কিছু না কিছু করতে হবে।

এদিকে নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতি সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসের অভূতপূর্ব সমস্যা হিসেবে হাজির হয়েছে, যাতে বাইডেনের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলোয় নির্বাচনী ফলাফলের বিপক্ষে অসংখ্য মামলা করেছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা। এছাড়া বাইডেনকে প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ওয়াশিংটনের অসহযোগিতা প্রদর্শন সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বৃহৎ কোম্পানিগুলোর শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন বাইডেন। সোমবার যে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে বাইডেন ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন জেনারেল মোটরসের প্রধান ম্যারি বারা, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, এফপি-সিআইও ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি রিচার্ড ট্রামকা।

ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের কাছে নিজের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। দেশব্যাপী ঘণ্টায় ১৫ ডলার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, ভালো বেতনের ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অগ্রসর প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর কাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *