চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে নিজেদের সাশ্রয়ী স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগ ‘অনার’ বিক্রি করে দিয়েছে। বিভাগটি কিনেছে স্থানীয় হ্যান্ডসেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল চায়নার নেতৃত্বাধীন ৪০টি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম। গতকাল হুয়াওয়ের এক ঘোষণায় জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে খারাপ পরিস্থিতিতে থাকায় অনার ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিক্রি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। খবর এএফপি।
বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে। শুধু তা-ই নয়; চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতার তকমাটিও দখলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে প্রতিষ্ঠানটির কনজিউমার ব্যবসা বিভাগ তীব্র চাপের মুখে রয়েছে। হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিপ ও প্রযুক্তি সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পরিস্থিতিতে অনেকটা নীরবে বিশ্বের কিছু বাজার থেকে ডিভাইস ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মাসে সাব-ব্র্যান্ড অনার স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগের আংশিক বিক্রির তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল। সর্বশেষ পুরো বিভাগটিই বেচে দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ে ব্র্যান্ডের অধীনে ডিভাইস ব্যবসা পরিচালনা করা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। যে কারণে বিক্রির মাধ্যমে অনার ব্র্যান্ডকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিক্রির চুক্তি অনুযায়ী, অনার স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগের গবেষণা ও উন্নয়ন সক্ষমতার একটি অংশ এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ব্যবসা বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পাবে ক্রেতা কনসোর্টিয়াম। নগদ অর্থে সম্পদ অনার বিভাগ বিক্রি করা হচ্ছে। জানা যায়, অনার বিভাগের ক্রেতা কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে থাকা ডিজিটাল চায়না হুয়াওয়ে ফোনের প্রধান পরিবেশক।
২০১৩ সালে হুয়াওয়ের সাশ্রয়ী সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে অনার ব্র্যান্ডের যাত্রা হয়। তবে অনার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে শাওমি, অপো ও ভিভোর মতো ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে অনার। হুয়াওয়ে অনার ব্র্যান্ডের আওতায় দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপসহ আরো কিছু বাজারে তুলনামূলক সাশ্রয়ী ফোন সরবরাহ করে আসছে।
এ বিষয়ে গত অক্টোবরেই টিএফটি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক কুও মিং-চি বলেছিলেন, হুয়াওয়ের যে কোনো ধরনের সম্পদ ক্রয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ধরনের অর্জন হতে পারে। সেটা অনার ডিভাইস ব্যবসা বিভাগ হোক কিংবা গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগের আংশিক ক্রয় হোক। কারণ হুয়াওয়ের অনার ব্র্যান্ড এরই মধ্যে বৈশ্বিক ডিভাইস বাজারে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। এর গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগও অন্য যে কোনো স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের চেয়ে অনেক উন্নত।
বৈশ্বিক প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজার মন্দা সময় পার করছে। এক্ষেত্রে তুলনামূলক সাশ্রয়ী ফোন বাজার ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে। গত বছর হুয়াওয়ের অনার ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব ৮ হাজার কোটি ইউয়ানে পৌঁছেছে। একই বছর প্রতিষ্ঠানটির অনার ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের নিট মুনাফা ৫০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়।
হুয়াওয়ে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি খাতে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি বর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইভজি নেটওয়ার্ক চুক্তি হুয়াওয়ের হাতছাড়া হওয়ার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসার ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ের কয়েক প্রান্তিক আগেও ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ছিল নজরকাড়া। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ এবং মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে নানা অযৌক্তিক অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি রুখতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বর্তমানে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসা বিভাগকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামবিষয়ক চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এসব চুক্তি হুয়াওয়ের সঙ্গে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তুলনামূলক ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বী নকিয়া ও এরিকসন বাগিয়ে নেয়।