পারিবারিক বিরোধ দমনের সহিংস ধারা

মখলুফ তার ওপর পূর্ববর্তী কর আরোপ করাকে উস্কানিমূলক হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন বলে মনে হলেও বাশার এটিকে পারস্পারিক স্বার্থের লেনেদেন হিসাবেও দেখে থাকতে পারেন। মাখলুফকে মূল্যবান বলে মনে করা হয় তার ৫শ’ কোটি ডলার সম্পদের কারণে, যা তিনি অর্জন করেছেন দেশের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সংস্থা সিরিয়াটেলসহ তার বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে এবং আসাদ সরকারের আশীর্বাদে।

২০১১ সালে প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে থাকা সিরিয়ান ৫০ পাউন্ড ২০২০ সালে প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৩ হাজার পাউন্ডে এসে ঠেকেছে। বর্তমানে সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু সিরিয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্কটে নিমজ্জিত, টিকে থাকার জন্য মখলুফের সহায়তা চায় দেশটি। তবে এই যুক্তি মাখলুফের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

মে মাসে, তিনি অনলাইনে বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন যেগুলিতে তিনি সৌজন্যতা বশতঃ বাশারকে সতর্ক করে দেন যে, বাশার মাখলুফের বেতনে পোষা বেসামরিক সৈন্যসহ আলাবিদের বিশাল সমর্থন হারিয়ে ফেলতে পারেন। মখলুফ পুরানো সাম্প্রদায়িক বিরোধকে কাজে লাগিয়ে কটাক্ষ করেছেন যে, আসল দোষটি প্রেসিডেন্টের সুন্নী স্ত্রী আসমার সাথে সম্পৃক্ত, যাকে তিনি আলাবিদের অর্থ চুরি করার চেষ্টায় পরোক্ষভাবে অভিযুক্ত করেছেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি বাশারের দায়বদ্ধতার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

এই ঘটনাগুলি সিরিয়াতে বাশার বিরোধীদের মধ্যে নতুন করে আশা জুগিয়েছে। তারা প্রত্যাশা করছেন যে, মাখলুফ হয়তো বাশারের অবস্থান আলাবিদের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে দুর্বল করে দিয়েছে এবং তার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যদিও বাশার তার পরিবারের মধ্যে থেকে সরাসরি বিরোধিতা সহিংসভাবে দমন করবেন বলে ব্যাপকভাবে প্রতীয়মান। প্রকৃতপক্ষে, বিষয়টি ধারাবাহিক ধারাতে ঘটে এসেছে।
প্রেসিডেন্টের ৪৫ বছর বয়সী আপন চাচাত ভাই এবং তার চাচা রিফাতের পুত্র রিবাল আল-আসাদ প্রেসিেেডন্ট বাশারের রোষানলে থাকাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৯৪ সালে দামেস্কের শেরাটন হোটেলের বাইরে বাশার তাকে গালিগালাজ করেন এবং এই বাকযুদ্ধ এক পর্যায়ে কুৎসিত হয়ে ওঠে। ভীত হয়ে রিবলের বাবা তাকে একটি বিমান টিকিট বুক করে দেন এবং চলে যেতে বলেন। কিন্তু বিমানবন্দরে বন্দুকধারী প্রেসিডেন্ট গার্ডরা রিবালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য আড়াই ঘণ্টা বিমান অপেক্ষা করিয়ে রাখে।

রিবাল ফরেন পলিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তবে রিফাত হাফেজ আল-আসাদকে হুমকি দেন, যদি তার ছেলের গায়ে একটি লোমও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, দামেস্কের প্রতিটি রাস্তায় তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হবেন। রিবাল বর্তমানে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়ে স্পেনে বসবাস করছেন এবং যখন তাকে একটি লিখিত বার্তার সাথে মাখলুফের প্রথম ভিডিও ক্লিপটি পাঠানো হয়েছিল, তিনি সেসময় লকডাউনে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।

রিবাল বিষয়টিকে ভয় দেখানোর একটি কৌশল হিসাবে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, এটি প্রথম দেখেই তিনি হেসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে রামিকে চিনি; তিনি কাপুরুষ। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারবেন না। বাশার ছাড়া তিনি কিছুই নন।’ রিবাল বলেন, ‘আপনি খুব সামান্যতেই নিজের প্রাণ খোয়াতে পারেন, যেমন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বাশারকে চ্যালেঞ্জ জানানো। এটি একটি নাটক মাত্র। বাশার রাশিয়ানদের এটা বলার জন্য রামিকে ব্যবহার করছেন, তিনি আলাবিদের সমর্থন হারাবেন এবং উপক‚লীয় অঞ্চলে যেখানে রুশদের নৌঘাঁটি এবং বিমানবন্দর রয়েছে সেখানে তাদের স্বার্থের ওপর এটি কুপ্রভাব ফেলবে।’

রিবাল ১৯৯৯ সালের ২০ অক্টোবরের ঘটনাগুলির স্মৃতিচারণ করেন যে, হাফিজের পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় তার বাবা রিফাত নয়, বরং বাশার যেন আসীন হতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্যই শাসক বাহিনী লাতাকিয়া উপক‚লে তার পারিবারিক বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি বলেন, ‘আমার চাচা হাফেজ অসুস্থ ছিলেন এবং উত্তরাধিকার মাত্র কিছু সময়ের ব্যাপার ছিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *