নতুন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী পায়নি বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। গত বছরের সামার ও ফল—এ দুই সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি। যদিও কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধস নেমেছে। সামার ও ফল—এ দুই সেমিস্টার মিলে এখন পর্যন্ত ডিআইইউতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে আড়াইশর কিছু বেশি।

শুধু ডিআইইউ নয়, হাতেগোনা দু-চারটি ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় আকারের ধস নামিয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সমিতি জানিয়েছে, করোনাকালে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে। এর মধ্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ শতাংশ, কোনোটির ৭০ শতাংশ এমনকি কয়েকটিতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে। সব মিলিয়ে গড়ে গত বছরের সামার সেমিস্টারের তুলনায় এবারের সামার সেমিস্টারে অন্তত ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হারিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ১ জুন থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সংস্থাটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কয়েক বছরে ক্রমান্বয়ে বাড়ার পর ২০১৮ সালে দেশের ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৯২-এ। ২০১৯ সালের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ না হলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যায় এ ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখিতা গত বছরও বজায় ছিল বলে অনুমান সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু করোনার প্রভাবে এ বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
কামরুল হাসান মামুন : সরকারকে ভয় দেখিয়ে আবারও কিছু প্রণোদনা নেওয়ার পায়তারা করছেন রুবানা হকরা? ≣ [১] উড়িষ্যা সরকারের ঘোষণা : করোনায় মৃত স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হবে শহীদের সম্মান ≣ অজয় দাশগুপ্ত: অপরাধীকে নিয়ে ট্রল করা আর তাকে পুঁজি করে যৌনতা ও কুৎসিত মন্তব্য করা কি এক বিষয়?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবারের আর্থিক সংকট, ঢাকার বাইরে অবস্থান ও সর্বোপরি করোনায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি হতে চাচ্ছে না। ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু শিক্ষার্থী পেলেও অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী সংকট মারাত্মক আকার নিয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন। একই সঙ্গে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। তার বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। তিনি বলেন, একদম শীর্ষ পর্যায়ের দু-চারটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পেয়েছে। এছাড়া সবাই শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে বড় সংকটে রয়েছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, এ বছরের সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে ৭৫ শতাংশ। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার এক নয়। কোথাও এটি ৫০ শতাংশের মতো কমেছে। আবার কোথাও ৮০-৯০ শতাংশও কমেছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি কমার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে আয়ের পথ সংকুচিত করেছে। ফলে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া যাচ্ছে না। এজন্য আমরা কয়েক দফায় আর্থিক প্রণোদনা চেয়ে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আসলে বেসরকারি হলেও এ দেশের ছেলে-মেয়েরাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের জন্য মানবসম্পদ তৈরির কাজ করছে। তাই সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো।

আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে গত বছরের সামারে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ জন। এ বছরের সামারে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে মাত্র ৫০০ জন। বর্তমানে ফল সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বছরের ফল সেমিস্টারে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী পেলেও এবার এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫০ শিক্ষার্থী পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

শিক্ষার্থী কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ভর্তি ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম রিন্টু বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে অন্যান্য খাতের মতো উচ্চশিক্ষা খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে অনেক পরিবারের আর্থিক দুর্দশা ও এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সূচক এখন খুবই নিম্নমুখী। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি যা-ই হোক না কেন, আমরা সেমিস্টারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে বড় ছাড় দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবুও শিক্ষার্থীদের দিক থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ফল ও স্প্রিং—এ দুই সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি (আইএসইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে ফল সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভর্তির ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফির ওপর ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে আইএসইউ। ছাত্রীদের জন্য ছাড় দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত আরো ২০ শতাংশ। এ বড় ছাড় ঘোষণার পরও তেমন সাড়া মিলছে না শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ফল সেমিস্টারে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় ইউজিসি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো অনুমোদনের পরও তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। পরিবারের আর্থিক সংকটের পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়াটাও এখন শিক্ষার্থী না পাওয়ার বড় একটি কারণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ শিক্ষার্থী সংকট কাটিয়ে ওঠা দুষ্কর।বণিক বার্তা

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *