দর্শকদের হলে ফেরাতে হলিউডে চলছে কৌশল নির্ধারণ

কভিড-১৯ মহামারীতে সারা দুনিয়াতেই সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে রয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরে। বাংলাদেশের হলগুলোও বন্ধ। এমনিতেই গত কয়েক বছর স্ট্রিমিং সাইটের তত্পরতায় সিনেমা হলগুলো চাপে ছিল। এবার কভিড-১৯ সেই চাপকে বৈশ্বিক সংকট তৈরি করেছে। দুশ্চিন্তায় আছেন হলিউডের ছবির প্রয়োজক, থিয়েটার সংশ্লিষ্টরাও। কভিড-১৯-এর পর দর্শকদের কীভাবে হলমুখী করা যায় তা নিয়ে নানা কৌশলের কথা ভাবছেন তারা।

হলিউড জুলাইয়ে হলে ছবি মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্টুডিওগুলোর বিপণন এজেন্সিগুলোর নানা রকম কৌশলে চলচ্চিত্রের প্রচারণা চালাচ্ছে। স্টুডিওকে এখন শুধু তাদের ছবির নয়, বরং দর্শকদের হলে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতেও প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। মহামারী, মানসিক ও অর্থনৈতিক সংকটের এ কালে কাজটা সহজ হচ্ছে না। নিউ লাইন সিনেমার সাবেক মার্কেটিং নির্বাহী ও বর্তমানে এএফআই ও শ্যাম্পান কলেজের শিক্ষক রাসেল স্কোয়ার্টজ বলেন, ‘ছবির আবেদন এখনো অটুট, দর্শকরা বরং আগের চেয়ে এখন বেশি হলে যেতে চাইবেন। তবে এখন সিনেমার বিজ্ঞাপনে ২০ সেকেন্ড যদি ছবির জন্য থাকে তাহলে ১০ সেকেন্ড দিতে হবে হলে যাওয়ার কথা বলে।’

মহামারী শুরুর আগেই ক্রিস্টোফার নোলানের টেনেট ছবি প্রচারণা শুরু হয়েছিল। ওয়ার্নার ব্রস লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড কেনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু মার্চে মহামারী আঘাত হানার পর সব বদলে যায়। হলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। বছরের প্রথমার্ধে মুক্তি পেতে যাওয়া ছবিগুলো বছরের শেষে নয়তো ২০২১ সালে পিছিয়ে গেছে। এ তালিকায় আছে বন্ড সিরিজের নো টাইম টু ডাইয়ের মতো ছবিও। পিছিয়ে যাওয়া তারিখ নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। এমন পরিস্থিতিতে হলিউডের স্টুডিওগুলো টেলিভিশনে তাদের ছবির বিজ্ঞাপনে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ কম খরচ করেছে। মে মাস থেকে হলিউডের গ্রীষ্মকালীন বক্স অফিসের সময়সূচি শুরু হয়। আইস্প টিভির মতে, এ সময় বিজ্ঞাপনের ব্যয় গত বছরের তুলনায় ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গেছে।

অন্যদিকে ডিভিডির বাজার শেষ হয়ে যাওয়ার পর গত এক দশকে হোম এন্টারটেইনমেন্ট বিকশিত না হয়ে বরং মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে, এখন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর রমরমা অবস্থা চলছে।

আইস্পটের কর্মকর্তা স্টুয়ার্ট শোয়ার্জাফেল বলেছেন, ‘কভিড-১৯-এর কারণে বিনোদনজগৎ একটা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনটা আগে কখনো ঘটেনি। এতদিন হোম এন্টারটেইনমেন্ট ছিল বৃত্তের একটা অংশমাত্র। প্রিমিয়াম ভিডিও অন ডিমান্ড (পিভিওডি) কি টিকে যাবে? এখনই বলাটা সম্ভব নয়।’

স্টুডিওগুলো আশা করছে যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমা হল জুলাইয়ে খুলে যাবে। মুক্তির তালিকায় আছে টেনেট (১৭ জুলাই), ডিজনির মুলান (২৪ জুলাই), প্যারামাউন্টের দ্য স্পঞ্জবব মুভি: স্পঞ্জ অন দ্য রান (৭ আগস্ট), ওয়ার্নার ব্রসের ওয়ান্ডার ওম্যান ১৯৮৪ (১৪ আগস্ট)।

অন্যদিকে বেশ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সলসটিক স্টুডিও। তারা রাসেল ক্রো অভিনীত থ্রিলার আনহেঞ্জডের মুক্তির তারিখ বরং এগিয়ে এনেছে। ছবিটি সেপ্টেম্বরের শুরুতে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন এটি আগামী ১ জুলাই মুক্তি দেয়া হবে। প্রচারণার সুনামি আর অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ছবিটি বক্স অফিসে ঝড় তুলবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ পথ অনুসরণ করে সনি তাদের রোমান্টিক কমেডি দ্য ব্রোকেন হার্টস গ্যালারি আগামী ১০ জুলাই মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। আনহেঞ্জডের ট্রেলার গতকাল পর্যন্ত ২০ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। অথচ প্রযোজকদের আশা ছিল পাঁচ কোটি ভিউ।

সলসটিক স্টুডিওর প্রধান মার্ক গিল বলেছেন, ‘এখন ২৫টি ছবি দর্শকদের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে না। বোঝা যাচ্ছে যে মানুষ সুসংবাদ শোনার অপেক্ষায় আছে। সবাই বিশ্বাস করতে চান যে দুনিয়ার স্বাভাবিক চেহারায় ফিরছে।’

সিনেমার মার্কেটিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দর্শকদের হলে ফিরতে রাজি করানো। টেনেট ছবি ট্রেলারের নিচে ছবির চেয়ে হলে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিষয়ে দর্শকরা বেশি মতামত দিচ্ছেন।

একজন মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এখন প্রশ্নটা হচ্ছে আপনার ছবি মাস্ক পরে হলে বসে দেখার যোগ্য কিনা? বলা যায় ‘মাস্ক পরার যোগ্য ছবি’। অনেকগুলো জরিপ নিশ্চিত করেছে যে পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলে দর্শকরা হলে যেতে আগ্রহী। বড় থিয়েটার চেইনগুলো সিনেমা হলে কী ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়ে বিজ্ঞাপনে লাখ লাখ ডলার খরচের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছবির চেয়ে হলে যেতে দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করতে এখন বেশি বিজ্ঞাপন দেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্টুডিওগুলো আশাবাদী যে মানুষ মহামারীর দুঃস্বপ্ন ভুলে নতুন করে ছবি ও কাজে ব্যস্ত হতে চায়। মার্ক গিল মনে করেন, আগামী এক বছর কঠিন সময় গেলেও পরের গ্রীষ্মটা হবে দারুণ সাফল্যের।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *