লেডি গাগা, বিয়ন্সে, টেলর সুইফট, জেনিফার লোপেজসহ বিশ্বখ্যাত তারকারা সম্প্রতি ইউটিউবে ‘ডিয়ার ক্লাস অব টোয়েন্টি টোয়েন্টি’ শিরোনামে বক্তব্য দিয়েছেন।
নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলো বন্ধ। আর তাই স্কুলগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান করতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীরা হতাশ ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছেন হলিউড তারকা ও সেলিব্রেটিরা। তারা এ শিক্ষার্থীদের বলেছেন, এ পরিস্থিতিতেও শিক্ষা সমাপন কম আনন্দের নয়।
ইউটিউব আয়োজন করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ভার্চুয়াল শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান—ডিয়ার ক্লাস অব টোয়েন্টি টোয়েন্টি। শিরোনামটি ঠিক করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
কয়েক ঘণ্টা লাইভস্ট্রিমে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত অনেক তারকা, যাদের মধ্যে আছেন লেডি গাগা, বিয়ন্সে, টেলর সুইফট, জেনিফার লোপেজ, জাস্টিন টিম্বারলেক, ডেমি লোভাটো, কেভিন ডুরান্ট প্রমুখ। ছিলেন বারাক ওবামা, বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসও।
গায়িকা লিজ্জোর গাওয়া গ্র্যাজুয়েশন সংগীত দিয়ে শুরু হয় এ ভার্চুয়াল আয়োজন। অনুষ্ঠানে টিম্বারলেক বলেন, ‘বাধার মুখে আমরা লড়াই করে নিজেদের চমকে দেয়ার ক্ষমতা রাখি। আমার দেখেছি ২০২০-এর গ্র্যাজুয়েটরা সে রকই কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছেন।
বারাক ওবামা বলেন, ‘আজ আপনাদের একটা লম্বা সফরের সমাপ্তি হচ্ছে। পেছনে ফিরে দেখুন কবে আপনারা স্কুল শুরু করেছিলেন। আপনারা যখন শেষ বছরে, তখন দুনিয়া আপনাদের পথে একটা মহামারী হাজির করেছে।’ মিশেল ওবামা বলেন, ‘আপনারা সবাই দারুণ একটা কাজ করেছেন। নিজের মাথাটা উপরে রাখুন এবং উদযাপন করুন।’
গায়িকা বিয়ন্সে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দেন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে ‘সমবেত কণ্ঠ’ দেয়ার জন্য।
টেলর সুইফট তার নিজের স্কুল গ্র্যাজুয়েশনের স্মৃতি ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, একটা রেডিও ট্যুরে থাকার কারণে তিনি নিজেও তার গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান মিস করেছিলেন। ‘আমি একটা ভাড়া করা গাড়িতে করে রেডিও ট্যুরে ছিলাম। সঙ্গে আমার মা ছিলেন। এক বিমানবন্দরের মেঝেতে বসে থাকা অবস্থায় আমি ডিপ্লোমা শেষ করার খবরটি পাই। একটা শিক্ষা হচ্ছে সবসময় অপ্রত্যাশিত কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা এবং যেকোনো অবস্থাতেই উদযাপন করা।’
বক্তৃতার মাঝে কানাডীয় সিটকম স্কিটস ক্রিকের অভিনেতারা এসে কিছুক্ষণ সবাইকে আনন্দ দেন। এরপর তারা গ্র্যামিজয়ী মারিয়াহ কারের ‘হিরো’ গানটি গেয়ে শোনান এবং কিছুক্ষণ পর স্বয়ং মারিয়াহ যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা এই বর্ণহীন সময়েও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন এ ঐতিহাসিক অর্জনে অভিনন্দন জানাই। সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, আপনাদের কাজ প্রশংসাযোগ্য, আমি শুধু বলতে চাই ক্লাস অব টোয়েন্টি টোয়েন্টি, আপনারা এটা করে দেখিয়েছেন!’
লেডি গাগার বক্তব্য ছিল বিশেষ। শুরুতে গাগা বলেন, তিনি একটা ভিন্ন বক্তব্য দেয়ার জন্য রেকর্ড করে রেখেছিলেন। কিন্তু এরপর জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর তার মনে হয়েছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন নিয়ে তার বলার জন্য আরো কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার আগে রেকর্ড করা হয়েছিল। আমার সেই বক্তব্য আজ এ দেশে যা বলা দরকার সরাসরি সে রকমটা ছিল না। আমি তাও বলতে চাই মন খারাপ করার মতো যেমন অনেক বিষয় আছে, তেমনি আছে উদযাপন করার অনেক কিছু। আপনারা এ দেশের বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কে দেখতে পাচ্ছেন। পরিবর্তন হবে এবং সেটা ইতিবাচক পথে।’
লেডি গাগা একটি রূপক ব্যবহার করে আমেরিকার সমাজকে একটি বনের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এ বনে বর্ণবাদী বীজ বপন করা হয়েছিল এবং তা বহু বছর ধরে বৈষম্যমূলক অনেক শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে। ‘এ বনেই আমাদের বাস। আমরাই এই মানুষ। এ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ আমরা সমাজে শত শত বছর ধরে তুলে ধরেছি। কিন্তু আমরা এখন এই ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’ লেডি গাগা আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যারা এই পরিবর্তন আনবেন, তারা ঠিক এই মুহূর্তে আমার কথাগুলো শুনছেন। আপনার হলেন সেই বীজ, যা একটু নতুন সুন্দর বনের জন্ম দেবে।’
কমেডিয়ান স্টিফেন কোলবার্ট বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন এক অনিশ্চিত সময় কাটাচ্ছেন। এবং এ সময় তাদের একটা বড় অভিজ্ঞতা হয়েছে। ‘এই অদ্ভুত সময় আপনাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। শিক্ষাটা হলো আজ আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক হতে যাচ্ছেন এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যা খুশি তাই করতে পারে না। তাকে অবস্থা অনুযায়ী কাজ করতে হয়, যেমনটা আজ আপনারা করছেন। আপনাদের পুরো প্রজন্ম এটা করেছে। আপনারা ত্যাগ শিকার করেছেন, যেন মানুষের জীবন বাঁচানো যায়। যেকোনো বড় সৃষ্টির আগে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং এখন আপনারা এর মধ্য থেকে আপনাদের পথটা খুঁজে নেবেন।’
‘ডিয়ার ক্লাস অব টোয়েন্টি টোয়েন্টি’তে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট গেটস, অ্যালফাবেট ও গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট কন্ডোলিত্জা রাইস, নোবেলজীয় মালালা ইউসুফজাই, গায়িকা কেটি পেরি, লিজ্জোসহ আরো অনেকে।