ঝুঁকি নেবে না বিসিবি

রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আর সবার মতো চিন্তিত বোর্ড কর্তারাও। ঘর থেকে বের হওয়াই যেখানে মৃতু্য ঝুঁকি, সেখানে ক্রিকেটারদের অনুশীলন নিয়ে রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করছে বোর্ড কর্তাদের মনে। ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যঝুঁকির ভাবনা বেড়েছে আরও, বোর্ড আবার সতর্ক-সাবধানি

ঝুঁকি নেবে না বিসিবি

জুলাইয়ে শ্রীলংকা সফরের জন্য প্রস্তুতিতে মাঠে নামতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সফরে যাওয়া নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তায় টাইগাররা -ফাইল ফটো জুলাইয়ে বাংলাদেশ দলের শ্রীলংকা সফর নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা চলতি সপ্তাহে। এ নিয়ে খেলোয়াড় এবং টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বিসিবির। সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত যাই আসুক, করোনার মধ্যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিয়ে সফরটি করতে চায় না বিসিবি। এছাড়া দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা। এতে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলনের সুযোগও বাতিল করে দিতে পারে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিসিবির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে জুলাইয়ের শ্রীলংকা সফর নিয়ে দুই রকম ভাবনাই কাজ করছে। শ্রীলংকার করোনা-পরিস্থিতি সফরের পক্ষে যুক্তি দিলেও সেটি টিকছে না বাংলাদেশের করোনা-পরিস্থিতির কারণে। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ আর মৃতু্যর সংখ্যা। গত রবি ও সোমবার টানা দুদিন বাংলাদেশে মৃতু্য হয়েছে ৪২ জনের। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি, অপেক্ষা করছি। দেশের করোনা-পরিস্থিতি ভালো না হলে কিছু করার নেই। আমরা কোনো ঝুঁকি নেব না।’

বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী অবশ্য এখনই সফরের সম্ভাবনা বাতিল করে দিচ্ছেন না, ‘শ্রীলংকা সফরের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটি দিকই আছে। এ কারণে আমরা একটু সময় নিচ্ছি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে। টিম ম্যানেজমেন্ট, ফিজিও, ট্রেনার ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা হচ্ছে।’

করোনার কারণে চাইলে চট করেই ‘না’ বলে দেওয়া যায় এসএলসিকে। কিন্তু বলা যাচ্ছে না ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। সফরটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। একবার স্থগিত হলে সেটি আবার কবে হবে, তা অনিশ্চিত। গত তিন বছরে শ্রীলংকার মাটিতে নিজেদের রেকর্ডও অনুপ্রাণিত করছে বাংলাদেশকে। তাছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে খেলা তো শুরু করতেই হবে। সব মিলিয়ে সেই শুরুর জন্য বিসিবির কাছে গুরুত্ব পেতে পারে শ্রীলংকা সফরই।

বিসিবির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, সফরটি নিয়ে এরইমধ্যে তারা দলের প্রধান কোচ, ফিজিও, ট্রেনারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করছেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গেও নিয়মিত কথা বলছেন, তাদের মতামত জানছেন। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভা এবং করোনা-পরবর্তী ক্রিকেট নিয়ে আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ সভায় নির্ধারণ হতে পারে এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপের ভাগ্য। আইসিসি ও এসিসির সিদ্ধান্ত জেনেই শ্রীলংকা সফরের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিসিবি।

বিসিবি সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিলেও শ্রীলংকা ক্রিকেটের (এসএলসি) হাতে অত সময় নেই। দেশটির করোনার সংক্রমণ যেহেতু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, যত দ্রম্নত সম্ভব মাঠে খেলা নামাতে চায় তারা। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত না গেলে এসএলসি ঘরোয়া টি২০ টুর্নামেন্ট শ্রীলংকা প্রিমিয়ার লিগ (এসএলপিএল) আয়োজন করতে আগ্রহী। তিন দিন আগে স্থানীয় এক পত্রিকাকে বোর্ডের সেক্রেটারি মোহন ডি সিলভা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সিরিজ যদি না হয়, আমাদের অক্টোবর-নভেম্বরে হতে যাওয়া টি২০ বিশ্বকাপে মনোযোগী হতে হবে। কারণ ওটাই আমাদের পরবর্তী সিরিজ। টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে আমরা এসএলপিএল আয়োজন করতে চাই।’

ক্রিকেট যার কাছে শুধু খেলা নয়, ধ্যানজ্ঞান- সেই ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মুশফিকুর রহিম ঈদের আগেই একা একা অনুশীলনের অনুমতি চেয়েছিলেন বোর্ডের কাছে। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতির কারণে বিসিবি তখন সে অনুমতি দেয়নি। ঈদের পর আবার ব্যক্তিগতভাবে মাঠে ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি স্কিল ট্রেনিং করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তিনি একা নন, বোর্ড থেকে জানা গেছে, আরও কয়েকজন ক্রিকেটার নিজেদের ফিটনেস ঠিক রাখা, মানসিক দিক থেকে চাঙা রাখার পাশাপাশি ক্রিকেটীয় স্কিলগুলোও ঝালাই করতে উদ্যমী হয়েছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এগুলো স্টেডিয়ামে না গিয়ে ঘরে বসে করা সম্ভব নয়। তাই ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি স্কিল ট্রেনিং করার জন্য রাজধানীর মিরপুরের শেরেবাংলা ও চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছেন কয়েকজন ক্রিকেটার। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতির কারণে শুরুতে না করে দিয়েছিল বোর্ড। তারপর আবার কিছুদিন আগে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান এবং সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ফেরার ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছেন তারা। নিয়ম মেনে শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া, সর্বোচ্চ একজন সঙ্গী নিয়ে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করতে পারবে ক্রিকেটাররা। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আর সবার মতো চিন্তিত বোর্ড কর্তারাও। ঘর থেকে বের হওয়াই যেখানে মৃতু্য ঝুঁকি, সেখানে ক্রিকেটারদের অনুশীলন নিয়ে রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করছে বোর্ড কর্তাদের মনে। ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যঝুঁকির ভাবনা বেড়েছে আরও, বোর্ড আবার সতর্ক-সাবধানি।

ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান নিজেই চিন্তায় পড়ে গেছেন। তার কথায় পরিষ্কার, বিসিবি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্রিকেটারদের বাসা থেকে বের হয়ে স্টেডিয়ামে গিয়ে কোনোরকম অনুশীলন করাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না। তারা বরং চাচ্ছেন এটা না হোক। আকরাম খান বলেছেন, ‘এখন যে অবস্থা, এর ভেতরে যতই একা একা হোক আর শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া অনুশীলন করুক না কেন, আমরা ক্রিকেটারদের সেই প্র্যাকটিসটাও কোনোরকম উৎসাহিত করছি না। তারপরও কেউ যদি একান্তই করতে চায়, তাকে যতটুকু সম্ভব লজিস্টিক হেল্প করা হবে। তবে নীতিগতভাবে আমরা তাদের এখন ঘরের বাইরে স্টেডিয়ামে গিয়ে অনুশীলন করাকে বরং নিরুৎসাহিত করছি। তারপরও তাদের ইচ্ছেতে বাধা দেওয়া হবে না।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *