ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে বিমান হামলার আশঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের টানা যুদ্ধের পর ‘আপাত শান্ত’ হয়ে এসেছে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত। কিন্তু লোকজনের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। তাদের আশঙ্কা, সীমান্তের ওপারে আবারও বিমান হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হবে। 

Unibots.in

আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিনভর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, ফুলতলি, আছাড়তলি এলাকা ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা এই আতঙ্কের কথা জানান। 

স্থানীয়রা জানান, যারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের ধারণা, মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের দখল করা ঘাঁটিগুলো সে দেশের সেনাবাহিনী পুনরায় উদ্ধার করবেন। এতে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারকে মাঝে মধ্যেই চক্কর দিতে দেখা যায়।  

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার | ছবি : সংগৃহীত

গতকাল শুক্রবার দিনের বেলায় গোলাগুলির তথ্য না থাকলেও রাত ১০টার দিকে তুমব্রু সীমান্তের লোকজন জানান, তারা সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি শুনেছেন। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ওপারেও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। 

স্থানীয়দের ধারণা, যেহেতু দুটি ক্যাম্প থেকেই দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সরে গেছে, ফলে সেখানে এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরাকান আর্মি।

ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো জানান, ক্যাম্প পুনর্দখল কিংবা আরাকান আর্মির ওপর আক্রমণ করার জন্য স্থলপথে এখানে আসার সুযোগ নেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর। তারা একমাত্র বিমান হামলা চালাতে পারে। সেই কারণে বিমান হামলার আতঙ্ক পেয়ে বসছে সবার মধ্যে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী হয়তো চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের ভিন্ন কৌশল থাকতে পারে। তারা এত সহজে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না।

বাজার পাড়ার বাসিন্দা নুর আহমেদ বলেন, টানা কয়েক দিন ধরে গোলাগুলির পর পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। মানুষ ঘর ছেড়ে বের হওয়া শুরু করেছে। তবে সবার নতুন করে ভয় হচ্ছে, দখল হওয়া ক্যাম্পগুলো পুনর্দখল করার জন্য মিয়ানমারের সেনারা আবার কখন কী করে বসে!

সীমান্তে সতর্ক পাহারায় বিজিবির সদস্যরা | ছবি : সংগৃহীত

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের পাশের বাসিন্দা সংবাদকর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। তার গ্রামের বাড়ির কিছু দূরে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটা ক্যাম্প আছে। সেই ক্যাম্পটি কয়েকদিন আগে দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। ক্যাম্পটি দখলে নিতে যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন মুহুর্মুহু গুলি এসে পড়ে ঘরের চালে। লোকজন বাইরে সরে যাওয়ায় কারও ক্ষতি হয়নি।

সংবাদকর্মী মাহমুদুল হাসানের আশঙ্কা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্যাম্পটি পুনরায় দখলে নিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর বিমান হামলা করতে পারে। তাহলে এর প্রভাব এপারেও পড়বে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মিয়ানমারের বিজিপিসহ ১৫৮ জন নাগরিককে সেদেশের সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর সীমান্ত শান্ত রয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *