রোহিঙ্গাদের আবার আশ্রয়ের প্রস্তাবে বাংলাদেশের না

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের মুখে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা নিজেদের আদি নিবাস ছেড়ে রাজ্যের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় আসা কয়েক শ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।

গত বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চলতি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে ওপারের গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সীমান্তের ওপারে লড়াই চলছে। রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সীমান্তের ওপারে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা।

প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সীমান্তের ওপার থেকে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে নাফ নদী হয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে একটি নৌকা ঢুকে পড়ে বলে জানা গেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, নৌকায় পাঁচজন রোহিঙ্গা আছে। তাদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ।

শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে গতকাল সন্ধ্যায় দেখা গেছে, প্রবেশপথে লোকজনের ভিড়। বিজিবির সদস্যরা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। নৌকায় করে আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে বিজিবির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংঘাত থেকে বাঁচতে চাওয়া লোকজনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে ইউএনএইচসিআর অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে।

মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র-Advertisement-

Ads by

টাস্কফোর্সের সভা

রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সাধারণত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি, নীতিকৌশল বাস্তবায়নের পর্যালোচনা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। অবশ্য গত বুধবারের সভায় মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশে এর প্রভাব ও সামনের দিনগুলোতে কোথায় নজর দেওয়া হবে, সেগুলো গুরুত্ব পেয়েছে।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, টাস্কফোর্সের সভায় বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য দুই দেশের সীমান্তের ১৯টি পয়েন্টে অপেক্ষমাণ প্রায় ৯০০ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় তুলেছিলেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি সুম্বল রিজভী। তিনি মানবিক কারণে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানান।আরও পড়ুনরোহিঙ্গাদের পাশে বৃহৎ শক্তিগুলো কে কোথায় 

বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কাজেই নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবিক উপদেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে রাখাইনে গৃহযুদ্ধের দামামা যত দিন বাজবে, তত দিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ থাকবে না।

মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

 এ সময় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি সরকারের অবস্থান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন। কারণ, এই মুহূর্তে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য নানাভাবে সংকট তৈরি করেছে। ফলে নতুন করে আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের নেই।

সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে রাখাইনের গৃহযুদ্ধের ব্যাপকতা এবং আরাকান আর্মির একের পর এক শহর দখল অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে সেখানকার লড়াই থামার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে নতুন করে যেসব রোহিঙ্গা আসবে, তারা কবে ফিরবে বা আদৌ ফিরতে পারবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংঘাত থেকে বাঁচতে চাওয়া লোকজনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে ইউএনএইচসিআর অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে। মানবিক সহায়তায় যুক্ত অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বা অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন এলে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছে তারা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *