গেটিসবার্গ বক্তৃতায় একতার আহ্বান বাইডেনের

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ঐতিহাসিক গেটিসবার্গ ময়দানে দেয়া ভাষণে জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। কভিড-১৯ রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এ মহামারীটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুরুত্ব না দেয়ায় দেশ একের পর এক সংকটে পড়ছে। মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ এ প্রদেশটিতে দেয়া ভাষণে এমন কথা বলেন। খবর গার্ডিয়ান।

গৃহযুদ্ধের স্মৃতিবাহী গেটিসবার্গ এখনো দেশটিতে বিভাজনের প্রতীক হয়ে রয়েছে। আগামী নভেম্বরের নির্বাচনকে দেশের আত্মাকে রক্ষার নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেন সাবেক এ ভাইস প্রেসিডেন্ট।

বাইডেন তার ভাষণে বলেন, আজ আমরা বিভক্ত ঘরে অবস্থান করছি। কিন্তু আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই বন্ধু, এটা বেশিদিন থাকবে না। আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি এবং আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। বিভাজন, ক্রোধ ও ঘৃণার তীরে আমাদের জাহাজ ভগ্নভাবে ফেলে যেতে পারি না।

বিভাজনের রাজনীতি দেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারে দলীয় অন্ধ আনুগত্য আমেরিকান গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলোকে হুমকিতে ফেলেছে।

নির্বাচিত হলে তিনি ‘আমেরিকান প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই দলের সমর্থন প্রত্যাশা করবেন বলে জানান বাইডেন। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী, বর্ণবৈষম্য ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মতো ইস্যুগুলোতে দ্বিদলীয় অংশগ্রহণ জরুরি ছিল বলে মনে করেন তিনি।

সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করলেও প্রেসিডেন্ট ও তার মিত্রদের মাস্ক পরায় অনীহা নিয়ে বাইডেন বলেন, মাস্ক পরিধান করা কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নয়। এটা একটা বৈজ্ঞানিক পরামর্শ। এ সময় তার হাতে মাস্ক দেখা যাচ্ছিল।

বাইডেন যখন ঐকমত্যের ডাক দিচ্ছেন, তখন ট্রাম্প অতিরিক্ত ত্রাণ তহবিল নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনা থেকে হঠাৎ করেই বেরিয়ে যান। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আরেকটি সহায়তা তহবিল জরুরি বলে বিবেচনা করছে মার্কিনিরা। কিন্তু প্যাকেজের আকার কেমন হবে এ নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মধ্যে টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে।

এরই মধ্যে সোমবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ১৫ অক্টোবর মিয়ামি বিতর্কে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তিনবার বিতর্কে অংশ নেয়ার কথা। এর মধ্যেই একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনায় আক্রান্তের খবর। তাকে এজন্য তিনদিন হাসপাতালেও থাকতে হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাইডেন বলছেন, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী সপ্তাহেও করোনায় আক্রান্ত থাকেন, তবে তিনি ওই বিতর্কে অংশ নেবেন না। মিয়ামি বিতর্কের পর তৃতীয় বা চূড়ান্ত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে ২২ অক্টোবর টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিলে।

গেটিসবার্গ বক্তৃতায় বর্ণবৈষম্য নিয়েও কথা বলে বাইডেন। তিনি বলেন, কেউ যদি বলে আমেরিকায় বর্ণবৈষম্য নেই, তাহলে সে তার চোখ বন্ধ রেখেছে। আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের ইতিহাস ৪০০ বছরের বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আজ আমেরিকাজুড়ে যখন দৃষ্টি দিই, তখন আমাকে উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে। দেশটি বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছে। একে অন্যের প্রতি আস্থা কমছে।

তবে জাতীয় ঐকমত্যের মধ্যে আশা খুঁজে পাচ্ছেন বাইডেন। আগামীতে তাতেই ভরসা রাখার আহ্বান রাখেন তিনি।

গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পেনসিলভানিয়াতেই বেড়ে ওঠেন বাইডেন এবং এটি দীর্ঘদিন ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে এখানে ট্রাম্প জয়ী হন। কিন্তু এবার বড় আকারের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *