গৃহায়নের সাবেক সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

অভিনব উপায় অন্যজনের নামে বরাদ্দ প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. বদিউল আলম। এজন্য প্রথমে ভগ্নিপতিকে আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) নিযুক্ত করেন। এরপর ভগ্নিপতির কাছ থেকে প্লটটি কিনে নেন তিনি। পরে সেই প্লট ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে বহুতল ভবন বানিয়ে ভাগে পাওয়া ফ্ল্যাটগুলো বেঁচেও দেন বদিউল আলম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ অভিযোগে বদিউল আলমের বিরুদ্ধে সোমবার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সালে ফজলুল হক চৌধুরী মিরপুর হাউজিং এস্টেটের সম্প্রসারিত রূপনগর আবাসিক এলাকায় (সেকশন-৮, ব্লক-বি, রোড নম্বর-৩, প্লট নম্বর-২৪) দুই কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান। বরাদ্দের অনুকূলে ফজলুল হক চৌধুরী চার কিস্তিতে সব টাকা পরিশোধ করেন। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর ওয়ারিশসূত্রে তার স্ত্রী-সন্তানরা ওই প্লটের মালিক হন। কিন্তু প্লটটি বুঝিয়ে না দিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঝুলিয়ে রাখে।

প্লটটির দখল বুঝিয়ে না দেয়ায় তার ওয়ারিশরা সাড়ে আট বছর পর ২০০৫ সালের মে মাসে তাদের নামে অন্য আরেকটি প্লট বরাদ্দ প্রদানের জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। প্লটটি হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ফজলুল হকের সন্তানদের সঙ্গে মো. মাসুদ করিম নামের একজনের পরিচয় করিয়ে দেন বদিউল আলম।

২০০৫ সালের ১৩ মার্চ থেকে ২০০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বদিউল আলম গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) এবং সদস্য (ভূমি) হিসেবে জমির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। বদিউল আলমের নেপথ্য কারসাজিতে ফজলুল হকের নামে বরাদ্দ প্লটটির ব্যাপারে যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মাসুম করিমকে আমমোক্তার নিযুক্ত করা হয়।

কমিশনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৪৮তম বোর্ডসভায় ফজলুল হকের নামে বরাদ্দ প্লটটির ব্যাপারে আলোচনা হয়। ওই সভায় দুই কাঠার প্লটের পরিবর্তে বিকল্প প্লট হিসেবে তাদের নামে ৬ নম্বর সেকশনে ‘বি’ ব্লকের অ্যাভিনিউ-৫ এ ১১/১ নম্বর প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৬৬ কাঠা।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, প্লটটির যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য যাকে আমমোক্তার নিযুক্ত করা হয়েছে, তিনি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য বদিউল আলমের আপন ভগ্নিপতি। পরে তিনি ভগ্নিপতির কাছ থেকে ওই প্লটটি ২০ লাখ ৪১ হাজার টাকায় কেনেন। বদিউল আলম প্লটটির মালিক হয়ে খান প্রপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। বদিউল আলম সেখানে ছয়টি ফ্ল্যাট পান। সবগুলোই তিনি বিক্রি করে দেন।

বদিউল আলম অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্লট দখলপূর্বক স্থানান্তর, রূপান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় দুদক মামলাটি দায়ের করেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *