বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই

মুজিব বর্ষ নিয়ে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মজীবন এবং দর্শনের ওপর আলোচনার জন্য সাধারণ প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নিজেই। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৪৭-এর আওতায় তিনি এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আমরা বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে চাই।

সংসদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ আলোচনার জন্য খোদ সংসদ নেতার প্রস্তাব তোলার নজির নিকট অতীতে নেই। সাধারণত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ বা সংসদের সিনিয়র কোনো নেতা সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় এনে তারই কন্যা শেখ হাসিনা এবার প্রস্তাব তুললেন।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাবটি ছিল: সংসদের অভিমত এই যে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করেননি। ১৯৪৭-৪৮ থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ছেষট্টির ছয় দফা, আটষট্টির আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন—দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১-এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বজ কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার নিরস্ত্র জনগণ ঘরে ঘরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলেছিল। ২৬ মার্চ ১৯৭১-এর প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মহান শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। লাল-সবুজের পতাকা ও সংবিধান। বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় বাঙালিকে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্বিত জাতিরূপে মাথা উঁচু করে চলার ক্ষেত্র রচনা করেছেন। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়কালে বাংলাদেশের উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২০ সালে জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মজীবন এবং দর্শনের ওপর জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হোক।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট না হলে বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।

সংসদে প্রচার করা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ জানুয়ারি তিনি কষ্ট করে এসে সবাইকে যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বললেন, সেই ঐক্যবদ্ধ তো থাকতে পারেনি। যাদের তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন সেই দেশের মানুষের হাতেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। দেশের মানুষের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল। তার বিশ্বাসটা বাঙালি জাতি রাখতে পারল না। সেই বিশ্বাসের মধ্যে একটি ঘাতক চক্র ঢুকে গেল। কিন্তু কারা পেছনে ছিল জানতে পারলেন না। এ বিশ্বাসঘাতক একটি মুষ্টিমেয় ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, এ দেশের আপমর জনগণ নয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। একসময় ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম সম্পূর্ণ মুখে ফেলা হয়েছিল। এত কষ্ট করে যিনি স্বাধীনতা এনে দিলেন সেই স্বাধীন দেশকে তিনি যখন গড়ে তুলছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কিন্তু দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরে তাকে হত্যা করা হলো—কত অপবাদ দিয়ে, কত মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে। তার মৃত্যুর পরে কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার! ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়। আজ সেই নাম (বঙ্গবন্ধুকে) আর কেউ মুছতে পারবে না। ইতিহাসকে কেউ মুছতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে মুজিব বর্ষ পালনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সৌভাগ্য ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এ সংসদে আমরা আছি। আমাদের সৌভাগ্য আমরা মুজিব বর্ষ উদযাপন করতে পারছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি চমত্কার ভাষণ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ইতিহাসের অনেক কথা সবার জানার একটা সুযোগ হয়েছে। জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা দেশে ফিরে এসেছি। আজ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যখন উদযাপন করছি তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা ২০২১ সালে উদযাপন করব।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *