মাঠে ফিরতে ব্যাকুল ছিলেন মুশফিকুর রহীম। করোনা মহামারির কারণে ঘরে বসেই কেটেছে চার মাস। করোনার শুরুতে তিনি বলেছিলেন ১৫ দিন ব্যাট-বল হাতে নিতে না পারলে তিনি পাগল হয়ে যাবেন। সেখানে এত লম্বা বিরতি তার সহ্য হয় কী করে! বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে তিনিই প্রথম অনুমতি চান মাঠে এসে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুশীলন করার। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ দারুণ ব্যবস্থাও করেছে ক্রিকেটারদের জন্য। সারাদেশে বেশ কয়েকটি ভেন্যু তারা প্রস্তুত করে দিয়েছে। যেখানে ১১ জন ক্রিকেটার অনুশীলনে অংশ নেন। অবশ্য গতকালই শেষ হয়েছে এই অনুশীলন পর্ব। ঈদের পর বিসিবি চাইলে ফের শুরু হবে।
ব্যক্তিগত অনুশীলনের শেষদিন গতকাল সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশসেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিক। বলেন, ‘টেলিভিশনে খেলা দেখলে আসলে আফসোস লাগে। সারাদিন বাসায় বসে পরিবারের সাথে সময় কাটানো ও খেলাটাই দেখা হয়। একটু হলেও খারাপ লাগে অনেকগুলো ৫০ বা ১০০ মিস হয়ে যাচ্ছে।’
তবে টিভিতে খেলা দেখেই মুশফিক চেষ্টা করছেন নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখতে। বিশেষ করে করোনার প্রভাবে বদলে গেছে ক্রিকেটের অনেক নিয়মকানুন। মাঠে ফিরলে যা টাইগারদের জন্য হবে একেবারেই নতুন। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘চেষ্টা করছি টিভিতে খেলা দেখে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে। এছাড়া নতুন নিয়ম যেমন ক্রিকেট বলে অনেক কিছু ব্যবহার করা যাবে না, ব্যাটসম্যানদেরও একটা কঠিন সময় থাকে। সবকিছু দেখে ওখান থেকেও শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন পুনরায় শুরু হবে আবার যেন আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি সেটাই চাই।’
বাস্তবতাও মানেন মুশফিক। করোনার কারণে স্থগিত হওয়া ক্রিকেটের সময়টা আসলে তাদের হাতে নেই সেটাও জানালেন অকপটে। বিশেষ করে চার মাস না খেলার নয়া অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, ‘প্রথমত এটা আমাদের হাতে নেই, তাই এটি নিয়ে চিন্তা করাটা আমি মনে করি বোকামি হবে। বিশেষ করে শেষ ৪ মাস সবার জন্যই কঠিন সময় গিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি বাসা থেকে যতটুকু কাজ করা যায়। আমার জীবনে প্রথম দেখা এমন চার মাস প্রায় লকডাউন। বিসিবিকে অসংখ্য ধন্যবাদ তারা আমাকে এমন সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে, এত সুন্দর করে পরিকল্পনামাফিক অনুশীলন করেছি ভালো ছিল।’
মুশফিক আশাবাদী ঈদের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই ক্রিকেট ফিরছে, যদিও তুলনা করতে গেলে তাদের সাথে আমাদের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। তবুও আমি আশাবাদী ঈদের পর যদি পরিস্থিতির আরেকটু উন্নতি হয় আমরা যেন আবার একসাথে একটা দল হয়ে অনুশীলন শুরু করতে পারি। কিন্তু আমি ৭-৮ দিন যেটা করেছি এটা খুবই ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। চার মাস ইনডোরে কাজ করা আর বাইরে কাজ করা সম্পূর্ণ আলাদা। চাচ্ছিলাম যে রোদে ও আউটফিল্ডে যেন রানিংটা করা যায়, ফিটনেস ওয়ার্কের সাথে স্কিল ওয়ার্কও। এটা হয়েছে যার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ।’
শুরুতে অনুশীলনে আসতে অবশ্য মুশফিকেরও ভয় ছিল। কারণ মিরপুর করোনার রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে অনুশীলন শুরু করতে পেরে দারুণ খুশি মুশফিক। তিনি বলেন, ‘আসলে যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি বলবো শুরুর দিকে একটু দ্বিধায় ছিলাম। একটু ভয় লাগছিল যে কীভাবে হবে আর আদৌ হবে কী না। যেহেতু মিরপুরের আশেপাশে সব জায়গায় রেড জোন। তো এখানে এসে যেটা দেখলাম তাতে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখানে এত সুন্দর পরিবেশ ও এত পরিষ্কার। আমি মনে করি ব্যক্তিগত অনুশীলনে বাকি ৫-৬ জন যারা আমার সাথে করেছে তারাও একমত হবে। খুবই ভালো একটা পরিবেশ ছিল।’
এই অনুশীলন মুশফিককে করেছে আত্মবিশ্বাসীও। তিনি বলেন, ‘যদি সবাই আত্মবিশ্বাসী থাকে আমরা মনে হয় গ্রুপে ১৫-২০ জন না হলেও দুইজন, চারজন, পাঁচজন বা সাতজন একসাথে শুরু করতে পারি। দেখেন সবকিছুই আসলে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার। আমরা কেউই চাই না যে বাসায় বসে থাকতে। গত চার মাস আমাদের প্রায় বাসায়ই বসে থাকতে হয়েছে। যে নিয়ম কানুনগুলো হবে সেগুলো অবশ্যই ভালোর জন্য। এবং এটা আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। আমি মনে করি শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও অনুশীলনে অভ্যাস করে ফেলতে পারলে আর সমস্যা হবে না।’